শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লোহা গরম করে গৃহ পরিচারিকার গোপনাঙ্গে ছ্যাঁকার অভিযোগ

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:০৭

রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া এলাকায় আঁখি মনি (১২) নামে এক গৃহপরিচারিকার বিরুদ্ধে টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে লোহা গরম করে গোপনাঙ্গ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। 

এক দন্তচিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, শিশুটির মাকে ডেকে এনে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। শিশুটির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় এলাকাবাসী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রেফার্ড করলেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শিশুটিকে ভর্তি না করে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আবারো শিশুটিকে নিয়ে তার মা নিজের বাড়ি কিশোরগঞ্জে চলে গেছে। তবে এ ঘটনা ঘটলেও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানা কিছুই জানেনা বলে জানিয়েছে।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের তালিকাভুক্ত ভিক্ষুক মৃত বাছেদ আলী ফকিরের মেয়ে আঁখি মনি। 

আঁখি মনির মা শিরিনা খাতুন জানায়, প্রতিবেশী ডালিম চন্দ্র রায় নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার মেয়ে দুই বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করতো রংপুর নগরীর আর্দশপাড়া মহল্লার দন্তচিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায়। গত ২৮ নভেম্বর ডালিম চন্দ্র রায় শিশু আঁখি মনির মা শিরিনা বেগমকে নিয়ে রংপুরের দন্তচিকিৎসক কান্তা বেগমের বাসায় যায়। সেখানে গেলে তারা জানায়- আঁখি মনি টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবে না। এ সময় তার মেয়ে সেখানে বলে সে টাকা চুরি করেনি। তবুও বাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক নির্যাতন ও গোপনাঙ্গে গরম ছ্যাঁকা দিয়েছে। এ অবস্থায় ওই দন্তচিকিৎসক কান্তা বেগম ও তার স্বামী রেজাউল বারী ৩শ’ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেয়। মেয়েকে নিয়ে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। এখানে এসে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে ডেকে বিস্তারিত জানান। 

গ্রামের নুরউদ্দিন আলী জানান, বিষয়টি জানার পর আমরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানায়। এরপর কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ এসে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. সাবির হোসেন সরকার জানান, শিশুটির সারা শরীরে ও তার গোপনাঙ্গে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে। সে কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলম্ব না করে শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে দন্তচিকিৎসক কান্তা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেয়েটি টাকা চুরি করেছে। ওর মাকে ডেকে আনলে মেয়েটির মা তাকে মেরেছে, আমরা মারিনি বা নির্যাতন করিনি। 

তবে নির্যাতনের শিকার আঁখি মনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলে, ওই দাঁতের ডাক্তার, ডাক্তারের স্বামী রেজাউল বারী, তার মা খালেদা বেগম তাকে নির্যাতন করে ও প্রসবের স্থানে গরম ছ্যাঁকা দেয়।

আরো পড়ুন: করোনায় মৃত্যু বেড়ে ৬৭১৩ জন

এদিকে সোমবার বিকেলে গুরুতর অসুস্থ শিশু আঁখি মনিকে নিয়ে তার মা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে তাদের ভর্তি না করে উল্টো নানা ধরনের হুমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।

এদিকে গৃহপরিচারিকা শিশুকে অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে তাদের কোন সন্ধান না পাওয়ায় কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে শিশুটির মায়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে তার মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি। উল্টো তাদের হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আঁখি মনি মেয়েটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। যেহেতু ঘটনাস্থল রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া মহল্লায় এবং ওই এলাকাটি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন সে কারণে এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয় জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা বিষয়টি জানেন না। পরে খবর পেয়ে তারা ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে মামলা নেবেন সেই সাথে দায়ীদের গ্রেফতার করার পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।


ইত্তেফাক/এএএম