শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেপরোয়া ইয়াবা পাচারকারীরা

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:৪৬

সর্বনাশা মাদক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক সংকুচিত হয়ে আসছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠা কিছু কিছু পাচারকারী অভিনব পন্থায় ইয়াবা পাচার করছে। এদিকে, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার থেমে নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মুখে বিপর্যস্ত ইয়াবা সিন্ডিকেটের চিহ্নিত সদস্যরা আত্মসমর্পণের নামে আইন বহির্ভূত সুযোগ নিয়ে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চাইছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারাকেন্দ্রিক ইয়াবা পাচারকারী চক্রের কিছু কিছু সদস্য জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো তত্পর হয়ে উঠছে এই মাদক পাচারে।

আনোয়ারার গহিরা থেকে গতকাল শনিবার ৬০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আবারো গ্রেফতার হয়েছে আজগর মাঝি। তিনি ইয়াবা পাচারের দায়ে গ্রেফতার হয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো মাঠে নেমেছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, তার ভাই আনোয়ার মাঝি ইয়াবা পাচারের দায়ে গ্রেফতার হয়ে এখনো কারাগারে। তারা দুই ভাইই সমুদ্রে চলাচলকারী ট্রলারের মাঝি। এছাড়াও আরো কিছু ইয়াবা পাচারকারী জামিনে ছাড়া পেয়ে বিভিন্ন সংস্থার সোর্স হিসেবে নিযুক্ত হয়ে গোপনে ইয়াবা পাচারে যুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের হাতে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে এক পাচারকারী। এই পাচারকারী পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচার করছিল। পলিথিনে মুড়িয়ে কালো স্কচটেপ দিয়ে আটকানো ইয়াবা তার পেটের ভেতরে এক্সরে মেশিনে ধরা পড়ে। পরে চিকিত্সকরা সেগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারকালে বছর দুয়েক আগে কয়েকজন ইয়াবা পাচারকারীর মৃত্যু হবার কথাও জানা যায়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও স্বীকার করেন যে, পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক কঠোর নজরদারির মুখে ছোট হয়ে আসলেও কিছু বেপরোয়া পাচারকারী অভিনব ও ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা খুঁজছে। কয়েক মাস আগে কক্সবাজার বিমান বন্দরে এক তরুণী পলিথিনে পেঁচিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ মেখে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইয়াবা তার যৌনাঙ্গের ভেতরে করে পাচারের সময় ধরা পড়ে। তরুণীটি কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের অপেক্ষায় ছিল। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিমান বন্দরগুলোকেও নজরদারির আওতায় নিয়ে এনেছে। আগে মনে হতো স্থল ও সমুদ্র পথে দেশে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামিম আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, মাদক পাচারের পরিমাণ আগের চেয়ে বহুগুণ কমেছে। তারপরও বেপরোয়া পাচারকারীদের কিছু সংখ্যক এই তত্পরতা থেকে নিবৃত্ত হয়নি। তিনি বলেন, ইয়াবাসহ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং কঠোর আইনের কারণে বহু পাচারকারী গা ঢাকা দিয়েছে। তারপরও যারা করছে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পন্থায় মাদক পাচার করছে। তিনি বলেন, সরকারি আইন অনুসারে কোনো পাচারকারীর কাছে পাঁচ গ্রামের বেশি কোকেন-হেরোইন জাতীয় মাদক পাওয়া গেলে এবং কোনো পাচারকারীর কাছে দুই হাজারের পিসের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে সেই ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যেসব ঘাগু চিহ্নিত পাচারকারী বর্তমানে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা পোষণ করছে তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়। দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে কোনো মাদক পাচারকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অচল বিআরটিসির ৫২৪ বাস

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এডিশনাল পুলিশ সুপার (সফর) একেএম এমরান ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, কোনো পাচারকারী যদি জামিনে থাকা অবস্থায় পুনরায় ধরা পড়ে তাহলে তার আগের জামিন বাতিল হবে। নতুন মামলাতেও তার আর জামিন হবে না। বর্তমানে পুলিশের কঠোর নজরদারি ও সরকারের কঠোর আইনের মুখে পাচারকারীরা কোনঠাসা। ইয়াবা পাচারের পরিমাণও অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, গত দুই আড়াই বছরে আনোয়ারা থেকে শুধু ইয়াবা ক্যারিয়ারদের নয়, মূল হোঁতাদেরও খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/আরকেজি