শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১১ বছর ধরে গোয়াল ঘরে বসবাস

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:০৩

পারভিনা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান মারা গেছেন ১১ বছর আগে। স্বামী মারা যাওয়ার পর আর শ্বশুর বাড়িতে ঠাই হয়নি পারভিনা খাতুন ও তার অবুঝ দুই শিশুর। এই ১১ বছর ধরে ছোট দুই ছেলে তুষার ও ইমরানকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন বাবার বাড়িতে। তবে বাবার বাড়িতে ঘরের স্বল্পতার কারণে তার জায়গা হয়েছে গোয়াল ঘরে। 

একপাশে গরু ও অন্যপাশে একটি খাট দিয়ে ১১ বছর যাবৎ তিনি ঐ গোয়াল ঘরে বসবাস করছেন। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে পারভিনা খাতুনের বাবা মৃত আফজাল সরদারের বাড়ি যেয়ে ঐ করুণ দৃশ্য দেখা যায়।

পারভিনা খাতুন বলেন, জায়গা জমি বিক্রি করে ১১ বছর আগে আমার স্বামী পার্শ্ববর্তী জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বিদেশে পাড়ি দেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর দুর্ঘটনায় মারা যায় তিনি। এরপর আমার জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়িতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই হতে ছেলেদের নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকি। আমার বড় ছেলে তুষার (১৬) সংসারের অভাব ঘুচাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজ করে মুদি দোকানে। আর ছোট ছেলে ইমরান (১৩) স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করছে।

আরও পড়ুন:ফেনীতে নৈশপ্রহরী হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড

পারভিনা আরও বলেন, আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে কোনো রকম মাঠে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এক পাশে গরু আর এক পাশে আমি থাকি। আমার কপাল এতোটাই খারাপ যে একটি বিধবা ভাতার কার্ডও জোটেনি আমার কপালে। বাবার বাড়িতে থাকার কোনো ঘর না থাকায় ১১ বছর ধরে আমি গোয়াল ঘরে বসবাস করছি।
অনেকে এসেছেন, দেখেছেন আমার দুরবস্থা। অনেকে কথাও দিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে কেউ এখনো আমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ঘর দেওয়ার কথা বললেও এখনো কেউ কথা রাখেননি।

পারভিনা খাতুনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। আমাদের বোনের জন্য ঘর করার জায়গা থাকলেও আমরা তাকে ঘর করে দিতে পারিনি। সরকার অনেককে ঘর দিচ্ছে। আমার বোনও একটি সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য। সে যেন সরকারিভাবে একটি থাকার ঘর পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমার সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল হক বলেন, ইউএনও বরাবর আবেদন করলে আমরা পরবর্তীতে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।

ইত্তেফাক/এমএএম