বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শতরঞ্জির গ্রাম নিসবেতগঞ্জ

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫২

রংপুর মহানগরীর উপকণ্ঠে সেনানিবাসের পশ্চিমে ঘাঘট নদীর তীরে অবস্থিত নিসবেতগঞ্জ নামের একটি গ্রাম। যা শতরঞ্জির গ্রাম নামেই পরিচিত। নিসবেতগঞ্জের প্রায় বাড়িতেই শোনা যায় তাঁতের মেশিনে শতরঞ্জি তৈরির ঘটাং ঘটাং শব্দ। শতরঞ্জি শিল্পের কারিগররা আপন মনে বুনে চলছেন নানান রকমের শতরঞ্জি। এই শতরঞ্জি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়াসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের তাঁত মেশিনে ঘটাং ঘটাং শব্দে দিনভর কাজ করছেন কারিগররা। তারা জানান, মজুরি বৈষম্যতার কারণে কষ্টে দিন চালাতে হচ্ছে তাদের। জানা গেছে, রংপুরের শতরঞ্জি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার প্রায় ৩৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশেও রংপুরের শতরঞ্জির ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে শতরঞ্জি তৈরির পাঁচটি কারখানা।

নিসবেতগঞ্জের শতরঞ্জি কারিগর গীতারানী (৩৫), সৈকত হোসেন (৩৭), ফারুক হেসেন (৪০) বলেন, বাঁশের তৈরি তাঁত মেশিনে শতরঞ্জি তৈরিতে মজুরি মিলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এক জন কারিগর দিনে ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি কাজ করতে পারেন না। আর এ কাজের মজুরি মিলে মাত্র ১২ থেকে ১৫ টাকা প্রতি ফুট। বর্তমানে এই শতরঞ্জি শিল্প চলছে ব্যক্তিমালিকানায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমজাদ হোসেন জানান, প্রাপ্ত তথ্যমতে, রংপুরের শতরঞ্জি রপ্তানি হচ্ছে যা হস্তশিল্পের ৬০ শতাংশ। বিগত তিন বছর ধরে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০ লাখ ডলার দেশে আনা সম্ভব হয়েছে এই রংপুরের উৎপাদিত শতরঞ্জির মাধ্যমে। নতুন উদ্যমে বাড়ি বাড়িও তৈরি হচ্ছে শতরঞ্জি। নগরীর নিসবেতগঞ্জের শতরঞ্জি পল্লি যেন এক বিশাল কারুপণ্যে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির আঙিনা কিংবা উঠানে টিনের ছাউনির নিচে নিপুণ হাতে চলছে সুঁই সুতোর কারুকাজ খচিত শতরঞ্জি বোনার কাজ। যেখানে আগে হাতির পা, জাফরি, ইটকাঠি, নাটাই ইত্যাদি নামের নকশা সংবলিত শতরঞ্জি তৈরি হতো সেখানে এখন আরো রং-বেরঙের বাহারি নকশার শতরঞ্জি উৎপাদিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ইউরোপ যাচ্ছে রংপুরের শতরঞ্জি

রংপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সরোয়ার টিটু বলেন, রংপুর নগরীর নিসবেতগঞ্জের শতরঞ্জি একটি প্রাচীন শিল্প। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, শতরঞ্জির গ্রাম নিসবেতগঞ্জে শিল্পীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণসহ ঋণ সুবিধা প্রদান করছি। রংপুরের ঐতিহাসিক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।

ইত্তেফাক/এমআর