শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদকাসক্তি নিরাময়ে কেন্দ্র হয়ে উঠেছে টর্চার সেল!

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১৯

রংপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই কেন্দ্রগুলো এখন হয়ে উঠছে রোগী পেটানোর ‘টর্চার সেল’। ‘প্রধান’ মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে এমন টর্চারসেলের সন্ধান মিলেছে রংপুর নগরের রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের পূর্ব গেট এলাকায়।    

‘প্রধান’ মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে বিশেষায়িত এই চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রতি রাতে ভেসে আসে রোগীর গগন বিদারী কান্নার আওয়াজ। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে এমন কান্নার আওয়াজ শুনে নিরাময় কেন্দ্রের কাছে জড়ো হয়েছিল এলাকার শত-শত মানুষ। কিন্তু তাদের কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি নিরাময় কেন্দ্রর কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং পুলিশে খবর দেন জনতা। প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা প্রবেশ করলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। 

আরও পড়ুন: জামালপুরে তিন খুনের মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড

এ বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শহিদুল্লাহ কায়সার জানান, 'শারীরিক নির্যাতনের আলামত পাওয়ায় রোগীদের সেখান থেকে উদ্ধার করে উপস্থিত স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদকাসক্তি নিরাময়ের নামে অপচিকিৎসাসহ বেশকিছু অনিয়ম থাকায় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানায়, 'প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায়ই লোহার পাইপ দিয়ে নির্যাতন চালান। এতে অনেকের পিঠে, কোমর ও হাঁটুতে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। অনেককে উলঙ্গ করে নির্যাতনের পর গোপনাঙ্গ ও চোখে মরিচের গুড়া দেয়া হয়। পাশাপাশি নির্যাতনের পাশাপাশি মল-মূত্র খাওয়ানোর অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।'

আরও পড়ুন: স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী গ্রেফতার

এমন লোমহর্ষক নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পরলে অন্যান্য রোগীর স্বজনরাও রাতেই ছুটে আসেন। তারা একত্রিত হয়ে কেন্দ্রের অভিযুক্ত লোকজনের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পুলিশে খবর দেওয়া হলে প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা কৌশলে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও সেখানে আসেন। 

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র মোট ২১ জনকে ছোট্ট দুটি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। এক সময় ১০ জন রোগীর চিকিৎসার অনুমতিসহ প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স ছিল। কিন্তু পরে এই নিরাময় কেন্দ্র আর নবায়ন করে নি। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এবং তাদের অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


ইত্তেফাক/এনএ