শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফেনীতে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার সমাজচ্যুত

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২১, ০১:৩২

এক পুলিশ সদস্য ধর্ষণ করেছিল ফেনীর ফুলগাজীর এক কিশোরীকে। সেই কিশোরী সম্প্রতি সন্তান জন্ম দিলে তাকে সমাজচ্যুত করেছেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঐ কিশোরীর বাবা অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওন, তার বাবা, মা ও মামা এবং অপর এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নবম শ্রেণির ঐ ছাত্রী সন্তান জন্ম দিলে ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সালিশ বৈঠকে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তারা ধর্ষণের বিচার না করে উলটো কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামি পুলিশের আরেক সদস্য পলাতক রয়েছেন।

কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম বছরখানেক আগে ঐ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একদিন ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে ফেনী শহরের একটি বাসায় নিয়ে ফলের জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে পান করান শাওন। এতে ঐ কিশোরী অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করেন শাওন।

মামলা দায়েরের পর ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি নেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট কামরুল হাসান। তিনি শাওনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলে শাওনের বর্তমান কর্মস্থল রাঙ্গামাটি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সমাজপতি কামরুল মাস্টার বলেন, ‘ঐ কিশোরীর বিয়ে হয়নি। অবৈধ সম্পর্কের কারণে সে বাচ্চা প্রসব করেছে। এটি সমাজের জন্য লজ্জাকর। এজন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি সামাজিক বৈঠকে তাদের সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি আমার একক সিদ্ধান্ত নয়। এ সিদ্ধান্তে সমাজের সবাই একমত হয়েছে।’

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা বলেন, ‘সমাজচ্যুতির কারণে এলাকার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না। সমাজপতিদের ভয়ে স্বজনেরাও আমাদের এড়িয়ে চলছে। ধর্ষকের বিচার না করে উলটো সবাই আমার এবং আমার পরিবারের বিচার শুরু করে দিয়েছে।’

ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ভুঁইয়া বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারের ব্যাপারে গ্রামবাসী যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।

ফুলগাজীর ইউএনও ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘এ খবর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে ঐ এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’ এ বিষয়ে ফুলগাজী থানার ওসি কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘সমাজচ্যুতির বিষয়টি আমি শুনিনি। বিষয়টি সত্য হলে সমাজপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ইত্তেফাক/এএইচপি