শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভাইয়ের পরিকল্পনায় বোন খুন

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৩

সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে আপন ভাইয়ের পরিকল্পনায় বোন শামীমা বেগমকে (৪৪) নেত্রকোনা জেলার একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে হত্যা ও লাশ নদীতে ফেলে গুম অপচেষ্টার ঘটনাটির ক্লু অবশেষে কুষ্টিয়ার পুলিশ উদঘাটন করেছে। হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর পরিকল্পনাকারী নিহতের আপন ভাই শফিউল ও চাচাতো ভাই শামীমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। 

সোমবার (৮ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

পুলিশ জানায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শফিউল আজম মায়ের মৃত্যুর পর জালিয়াতির আশ্রয়ে অন্য এক মহিলাকে তার মা সাজিয়ে মায়ের নামে দলিলকৃত ঢাকাস্থ সংগ্রাম স্মরণীর দক্ষিনখান এলাকার ৬তলা বাড়ি ও একটি মার্কেট নিজ নামে রেজিস্ট্রিকৃত করে নেন। পরবর্তীতে জালিয়াতির এ ঘটনাটি টের পেয়ে শফিউলের পিতা আশরাফ উদ্দিন বাদি হয়ে ঢাকায় সিভিল কোর্টে মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন শফিউলের  স্বামী পরিত্যক্তা বোন শামীমা বেগম। ত্রিশ বছর আগে নেত্রকোনা জেলায় শামীমার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনায় তিনি তার বাবার সাথেই ঢাকার বাড়িতে বসবাস করতেন। বাবার সাথে বসবাসের এক পর্যায়ে ভাই শফিউলের অত্যাচারে শামীমা নেত্রকোনায় স্বামীর সংসারে ফিরে  ইচ্ছা পোষণ করেন। এ সুযোগে শফিউল পুরো সম্পত্তি আত্মসাৎ ও মামলার সাক্ষীকে সরিয়ে দিতে বোন শামীমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ সুযোগে হত্যার পরিকল্পনাকারী শফিউল তার চাচাতো ভাই শামীমের সহযোগিতায় বোন শামীমাকে স্বামীর ফিরে ফিরিয়ে দেয়ার কৌশল এঁটে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে উঠেন। এরপর শফিউলের নির্দেশমতো ওই রাতেই চাচাতো ভাই শামীমসহ দুর্বৃত্তরা শামীমা গলা কেটে ও শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করে।

হত্যার পর দুর্বৃত্তরা লাশ গুম করতে বস্তাবন্দী লাশ নেত্রকোনা জেলার কংস নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে নেত্রকোনার কংস নদীতে ভেসে উঠা অজ্ঞাত পরিচয় নারীর লাশ সেখানকার পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নেত্রকোনা থানায় পুলিশবাদি মামলা করা হয়েছে। পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের পর শফিউল তার বোন শামীমা নিখোঁজ হন বলে গত ৪ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় জিডি করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে। জিডির সূত্র ধরে তদন্তে নেমে মিরপুর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা শফিউলের চাচাতো ভাই শামীম হোসেনকে প্রথমে গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নিহতের আপন ভাই শফিউল আজমকে সোমবার গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের নেত্রকোনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এক মাস আগে অন্য জেলায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নেত্রকোনা জেলায় পুলিশ বাদি মামলা হয়েছে তাই আসামিদের নেত্রকোনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে এসপি জানান। 
ইত্তেফাক/এমএএম