শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সব হারালেন হারাধন সাহা

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০২:০৩

লঞ্চডুবির ঘটনায় স্ত্রী ও এক ছেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আরেক ছেলে এখনো নিখোঁজ। তারও যে বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ। প্রিয় মানুষদের হারিয়ে পাগলপ্রায় মুন্সীরহাটের ডাল ও চালের ব্যবসায়ী হারাধন সাহা।

জানা গেছে, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে তিনি শহরের মাল পাড়ায় বসবাস করেন। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আকাস সাহা অনিককে (১৩) চোখের ডাক্তার দেখাতে রবিবার ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাই বিকাশ সাহা ও মা অনিতা সাহা। ব্যবসায়ী কাজে ব্যস্ত থাকায় নিজে যেতে পারেননি হারাধন সাহা। প্রথমে বড় ছেলে বিকাশ সাহার সাথে পাঠাতে চেয়েছিলেন ছোট ছেলেকে। কিন্তু মাকে ছাড়া অনিক ডাক্তার দেখাতে যাবে না, তাই মাও সাথে যায় তার।

এরপর ক্ষণে ক্ষণে মোবাইলে কল করে অনিতা রানী সাহা তাদের অবস্থান স্বামীকে জানাতে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার পরই অনিতা সর্বশেষ স্বামীকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা লঞ্চে উঠেছি, মাত্র লঞ্চ ছেড়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যেই বাসায় এসে পৌঁছবো।’ হারাধন সাহা অপেক্ষা করছিলেন কখন আসবে তার স্ত্রী ও সন্তানরা। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে কল দিয়ে দেখেন স্ত্রীর মোবাইল ফোন বন্ধ। মাল পাড়ার বাসায় ছুটে এসে দেখেন স্ত্রী ও সন্তানরা তখনো বাসায় আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নারায়ণগঞ্জের কয়লাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যায় মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চ ডুবেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে সন্ধান করতে থাকেন স্ত্রী ও দু’সন্তানকে।

রাত ২টার দিকে শীতলক্ষ্যা থেকে স্ত্রী অনিতা রানি সাহার লাশ উদ্ধার হয়। তার ২ সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন শীতলক্ষ্যার তীরে। রাতভর অপেক্ষার পর গতকাল সোমবার দুপুরে লঞ্চ উদ্ধারের পর তার বড় ছেলে ২২ বছরের বিকাস সাহার লাশ লঞ্চের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়। কিন্তু অনিক এখনও নিখোঁজ। হারাধন সাহা পরিবারের সকলকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

গতকাল বিকালে স্ত্রী ও ছেলের দাহ সম্পন্ন হয়। হারাধন সাহা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন তার ছোট ছেলে অনিকের জন্য। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলায় হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মুন্সীগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী অনিতা রানী সাহার বাবার বাড়ি শহরের ইদ্রাকপুর এলাকায়। হারাধন সাহার পরিবারে তিনি ছাড়া আর কেউ রইল না।

এদিকে, ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে যে ২৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে তারমধ্যে ১৯ জনের বাড়িই মুন্সীগঞ্জ জেলায়। মুন্সীগঞ্জে নিহতদের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম।

ইত্তেফাক/এমআর