শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতায় ৪৫ মামলায় আসামি ৩০ হাজার, গ্রেফতার ৩২

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৯:২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪০টি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া আশুগঞ্জ থানায় ২টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়।

৪৫টি মামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করা হলেও এর মধ্যে মাত্র ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হরতালের দিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরকারী আরমান আলিফ (২২)। গত ৪ মে রাতে সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকা থেকে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল গ্রেফতার করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় আরমান আলিফের ভাড়া বাসায় তল্লাশী চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন এবং ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার  করে।

পুলিশ জানায়, তান্ডবের সময় ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেফতার চেষ্টা চলছে। হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ৪৫ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানাতেই ৪০টি মামলা দায়ের করা হয়। ৪৫টি মামলায় ৩০ হাজারেরও বেশী লোককে আসামী করা হয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ৩২ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামীদের সনাক্ত করা হচ্ছে। 


জানা যায়, ৪৫টির মধ্যে ছয়টি মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি ৩৯টি মামলায় সবাই ‘অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী’। কোনো কোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাঁদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়। তবে কোনো মামলাতেই হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মীর নাম নেই। 

এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আবদুন নূর একের পর এক ঘটনার জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। 

সুর সম্রাট ওস্তাদি দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের সাধারন সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, ২০১৬ সালের ১২জানুয়ারিও এখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সে ঘটনার বিচার হয়নি। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান আমলে মৌলবাদ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেশ স্বাধীনের আগে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। এবারের ধ্বংসযজ্ঞে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়। এসব থেকে বুঝা যায় এটা পরিকল্পিত হামলা।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মেয়রের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সড়ক ও জনপথ, গণপুর্ত, সার্কিট হাউজ, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃ সদন, ব্রাদার্স ক্লাব, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।

ইত্তেফাক/এনএ