শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পেটে গজ রেখে ৫ মাস পর অপারেশন

প্রসূতির মৃত্যু: ডাক্তারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:০৪

কুমিল্লায় পেটে গজ রেখে ‘ভুল অপারেশনে’ শারমিন আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে ৩ ডাক্তারসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ওই প্রসূতির বাবা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোবারক হোসেন বাদী হয়ে বুধবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে দেবিদ্বার থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। 

মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হচ্ছে- দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রোজিনা আক্তার, উপজেলা সদরের আল ইসলাম নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা, এ্যানেসথেসিয়া ডা. মেহেদুল হাসান পারভেজ, হাসপাতালের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ ও গ্রাম্য চিকিৎসক সফিকুর রহমান। 

গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় প্রসূতি শারমিন আক্তারের মৃত্যু হয়। পেটে গজ রেখে ভুল অপারেশনের এ ঘটনায় দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, জেলার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোবারক হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তারকে গত বছরের ৫ নভেম্বর দেবিদ্বার আল ইসলাম হসপিটালে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের খন্ডকালীন চিকিৎসক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রোজিনা আক্তার ও তার সহযোগী ডা. শামীমা আক্তার লিন্টাসহ অন্যান্যরা। গত ৯ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। 

শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন জানান, ‘ওই প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর তার বোনের পেটের ব্যথা আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন। কিন্তু তার জীবন সংকটাপন্ন দেখে গত ৬ এপ্রিল জেলার ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে তার অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে তাকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘ এ সময়ে দেশের অনেক নামী-দামী হসপিটালে ঘুরেছি, অর্থ ব্যয় করেছি। কিন্তু সব স্থানেই ভুল চিকিৎসা ও প্রতারিত হয়েছি। প্রকৃত রোগ কেউই নির্ণয় করতে পারেনি। ভুল অপারেশনে আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার বাবা বাদী হয়ে ৩ জন চিকিৎসকসহ ৫ জনের নামে থানায় মামলা করেছেন।’ 

ওই প্রসূতির স্বামী জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের রাসেল মিয়া জানান, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুই শিশু সন্তান এতিম হয়েছে। এখন তাদের কে দেখবে।’ বুধবার জেলার দেবিদ্বারের হোসেনপুর গ্রামের বাড়িতে ওই প্রসূতির বাবার বাড়িতে প্রথম জানাজা এবং তার স্বামীর বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামে ২য় জানাজা শেষে তাকে তাদের পারিবারিক দাফন করা হয়। 

প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে দেবিদ্বার আল ইসলাম হাসপাতালের চেয়ারম্যান নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, ‘ওই প্রসূতির দুটি অপারেশন হয়েছে পৃথক দুটি হাসপাতালে। তাই কোন হাসপাতালে অপারেশনের ভুলে এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা তদন্তে বের হবে।’ 

অপারেশনকারী সার্জন ডা. রোজিনা আক্তার বলেন, ‘৫ মাস আগে প্রসূতি শারমিনের সফল অপারেশন করার পর সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে ফিরে যায়, পরে ১২তম দিনে এসে তিনি সেলাই কেটে যান। কিন্তু তিনি তখনো তার সমস্যার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা আমাকে বলেননি। এছাড়াও ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের দেয়া ছাড়পত্রে অপারেশনে গজ বের করার কথা লেখা নেই, সেখানে লেখা আছে ‘লাম্প এভডুমিন’। মেডিকেল ভাষায় যাকে বলা হয় টিউমার কিংবা পেট ফুলা জাতীয় সমস্যার সন্দেহে অপারেশন।’ 

দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ৩ জন ডাক্তারসহ ৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’ 

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাটি তদন্তের জন্য পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইত্তেফাক/এমএএম