বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তরুণীকে হত্যার পর ড্রামে ভরে ডোবায় ফেলেন পুলিশ কনস্টেবল

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০৯

রাজশাহীর সিটি বাইপাস সড়কের পাশের ডোবায় গত শুক্রবার পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত তরুণীর লাশের পরিচয় মেলেছে। গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিজে অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পুলিশকে জানিয়েছে। 

রবিবার ভোরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহীর সদস্যরা ওই তরুণীকে খুনের অভিযোগে রাজশাহী রেলওয়ে থানার (জিআরপি) পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে রবিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালকসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ সময় জব্দ করা হয় যে মাইক্রোবাসে লাশ নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সেটি।

গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের বাড়ি পাবনার আতইকুল্লা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। সে রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রবিবার ভোরে নাটোরের লালপুরের বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেফতার করে। পরে সে পুলিশের কাছে লাশের অজ্ঞাত তরুণীর পরিচয় প্রকাশ করে।

ননিকা রাণী রায়। ছবি: ইত্তেফাক

গ্রেফতার নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন-নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসের চালক নগরীর বিলসিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫)। 

নিহত ওই তরুণীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৪)। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁ সদরের মিলনপুর। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য নার্সিং ডিপ্লোমা সমাপ্ত করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নগরীর পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন ননিকা। রবিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ। 

পিবিআই সূত্র জানায়, নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওই তরুণীকে হত্যা করে নিমাই চন্দ্র সরকার। ওই বাড়িটিও জিআরপির কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র গত ৬ এপ্রিল ভাড়া নিয়েছিল। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। সে বগুড়ায় কর্মরত। রবিবার বিকেলে পিবিআই সদস্যরা ওই বাড়িতে সরেজমিন তদন্তে গিয়েছিল।

ননিকা রায়ের লাশ উদ্ধার করছে পুলিশ। ছবি: ইত্তেফাক

পিবিআই সূত্র আরও জানায়, কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র, নার্স ননিকা রায়কে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। সে জানিয়েছে ৬-৭ বছর ধরে ননিকা রাণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। ননিকা বিয়ের জন্য নিমাইকে চাপ দেয়। এ কারণে তাকে হত্যার পর ড্রামে লাশ ভরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। নগরীতে স্থাপিত সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এবং তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে খুনি কনস্টেবল নিমাই চন্দ্রকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও পিবিআই সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, নিমাই চন্দ্র গত সাত বছর ধরে রাজশাহী জিআরপি থানায় কর্মরত। এর আগে সে রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত ছিল। আরএমপির ডিবিতে চাকরির সময় কাজিরহাটা অফিসের পাশের বাড়ির এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও তৈরি করে নিমাই চন্দ্র। পরে ওই ভিডিও কম্পিউটারের দোকান থেকে মানুষের হাতে হাতে চলে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় নিমাই চন্দ্রকে তখন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে নানা কৌশলে নিমাই চন্দ্র চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে রাজশাহীতেই যোগ দেয়।

শুক্রবার নগরীর অদূরে বাইপাস সড়কের সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহ্ মখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। লাশ উদ্ধারের সময় ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করে। 

ইত্তেফাক/এএএম