শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তালায় গৃহবধূর ঘর থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩৮

সাতক্ষীরার তালায় টাকা ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গৃহবধূ ফেরদৌসী পারভীনকে (৪৫) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল্লাহর স্ত্রী। রবিবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মিঠাবাড়ি গ্রামে ফসল ক্ষেতের পাশে একটি ড্রেনে তার লাশ পাওয়া যায়। এদিকে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পরে তার ঘরের তোশকের নিচ থেকে একটি সুইসাইড লেটার ও ২টি পাঁচশত টাকার নোট উদ্ধার করা হয়। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি ওই সুইসাইড নোট ফেরদৌসীর লেখা নয়।

জানা যায়, কয়েক দশক আগে নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামের মৃত শেখ জাকির হোসেনের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহর সাথে সরুলিয়া ইউনিয়নের ভারসা গ্রামের ইনসাফ সরদারের বড় মেয়ে মোছা. ফেরদৌসী খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের কোলজুড়ে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ২০০৬ সালে শেখ আব্দুল্লাহ মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে আব্দুল্লাহ প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিলো।

সেই সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে একই গ্রামের লুৎফর গাইনের ছেলে নারীলোভী আব্দুস সবুর গাইন (৪৫)। এক পর্যায়ে মৃত শেখ আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী মোছা. ফেরদৌসী খাতুনকে বিয়েও করেন তিনি। এরপরে ফেরদৌসীর প্রথম স্বামীর বাড়িতে টাকা-পয়সা নিয়ে সবুর আরাম আয়েশে দিন কাটাতে থাকে। এভাবে সবুর টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল মিলে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তা লোকমুখে ফেরদৌসীর প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারেন। অত্র এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে সবুরের কাছে ওই টাকা চেয়েছিলো ফেরদৌসীর প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা। সবুর তা না দিয়ে ওই গৃহবধূকে কৌশলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতের ড্রেনে ফেলে দেয় বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে চলছে তুমুল গুঞ্জন। এদিকে গৃহবধূর মৃত্যুর পরে তার ঘর পরিষ্কার করতে যেয়ে তোশকের নিচ থেকে একটি সুইসাইড নোট ও ২টি পাঁচ শত টাকার নোট উদ্ধার করে ফেরদৌসীর পরিবারের লোকজন।

এ ব্যাপারে নগরঘাটা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুস সামাদ জানান, ওই গৃহবধূ ফেরদৌসী দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে না থেকে প্রথম স্বামীর ঘরে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। সবুরের সাথে পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিনের ফেরদৌসীর। তার কাছ থেকে সবুর বহু টাকা নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। ওই টাকার বিষয়ে ফেরদৌসীর প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারায় তাদের পরিবারের মধ্যে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হয়। সেটিকে পুঁজি করে কৌশলে ফেরদৌসীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কে বা কারা তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী ড্রেনের মধ্যে ফেলে রাখে। ওই গৃহবধূর লাশ দেখে মনে হয়নি যে সে বিষ খেয়েছে। তার মুখে কোনো গন্ধও দেখিনি। তবে একজন মানুষ বিষ খেলে যেভাবে পড়ে থাকে সেভাবে ফেরদৌসীকে দেখিনি আমরা।

বিষয়টি সম্পর্কে গৃহবধূর মেয়ে আকলিমা খাতুন জানান, বাবার মৃত্যুর পরে আমার মা এলাকার সবুর নামের এক ব্যক্তিকে বিবাহ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি আমার মা আমাদের বাড়িতে থাকেন। কখনও সবুরের বাড়িতে ছিলো না। পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে আমার বাবার প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিল। ওই জমির অধিকাংশ আমার মা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বন্ধক রেখে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সবুরকে দিয়েছিলো। এছাড়াও আমার মা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল, তার নামে রেজিস্ট্রিকৃত ৫ শতক জমির দলিল সবুরের কাছে রেখে দেয়। তা লোকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরে মা বলেছিলাম। আমার মা আমাদের কাছে বলেছিল ১ মাসের মধ্যে সবুরের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করে দিবে। ওই ঘটনার পরের দিন কে বা কারা আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার মায়ের ঘরের তোশকের নিচে একটি সুইসাইড নোট ও ২টি পাঁচ শত টাকার নোট রেখে দিয়েছে। ওই লেখার সাথে আমার মায়ের হাতের লেখার কোনো মিল নেই। আমার মাকে হত্যার করার পূর্বে বা পরে কেউ আমাদের সম্মান নষ্ট করার জন্য ওই ঘরের তোশকের নিচে ভুয়া সুইসাইড নোট রেখেছে। এ সময় মায়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কে বা কারা একটি বিষের বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ড্রেনের মধ্যে পশ্চিম দিকে হেলান দিয়ে ফেলে রাখে। ওই সময়ে গৃহবধূর ডান পায়ে একটি জুতা ছিলো এবং বাম পা ভাঁজ করা অবস্থায় ছিলো। তখন তার মুখে কোনো বিষের গন্ধ ছিল না। তারা আরও জানান, সবুরের সাথে বিয়ে করে ফেরদৌসি। কিন্তু কখনও সুখী ছিলো না ওই দম্পতি। প্রায় সময় টাকার জন্য সবুর ফেরদৌসিকে মারপিট করতো। এমনকি মৃত্যুর পূর্বের রাতেও সবুর ফেরদৌসীকে মারপিট করেছিল তা আমরা জেনেও কিছু বলতে পারিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, নগরঘাটার মিঠাবাড়ি গ্রামের চৌকিদার আব্দুস সবুরের দ্বিতীয় স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুন। ফেরদৌসী খাতুনের প্রথম স্বামী আব্দুল্লাহ বছর তিনেক আগে মারা যান। পরে আব্দুস সবুরকে বিয়ে করেন তিনি। তবে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে জানা যাবে কি কারণে তিনি মারা গেছেন।

ইত্তেফাক/এমআর