শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটুনি, শিক্ষক বহিষ্কার

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪৭

নির্ধারিত বাড়ির কাজ না লিখে অন্য লেখা জমা দেওয়ার অপরাধে সাত বছরের কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন এক শিক্ষক। পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জানতে পারে ওই শিক্ষার্থীর পিতা। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠলে বিষয়টি সুরাহা করতে সোমবার (১৯ এপ্রিল) সালিশি বৈঠকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বহিষ্কার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কিসমত কুলসুম কওমি মাদ্রাসায়।

ফেসবুকে এমডি লাভলু মিয়া মিলন নামের প্রফাইলে মারপিটের ১মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি  আপলোড করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের ক্লাশে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক একহাতে একটি খাতা বা বই অন্য হাতে একটি লাঠি (বেত) নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষন পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত একজন শিক্ষকার্থীকে একটি আঘাত করেন। পরে সাদা পাঞ্জাবি পড়া একজন শিশু শিক্ষার্থীকে মাথা নিচু করে মাটিতে লাগিয়ে পিছনে সজোড়ে কয়েকটি আঘাত করে পরে ওই শিক্ষার্থীর হাত ধরে বেধরক পিটাতে থাকে, কখনো মাটিতে আছড়াতে থাকে। এতে ওই শিক্ষার্থী চিৎকার করতে থাকে।

জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী পাথরডুবী বাজারের বাসিন্দা এবং ঢেবঢেবি বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেনের ছেলে লাম মিয়া ওরফে লাল মিয়া (৭)। সে ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামাতের শিক্ষার্থী।

মোতালেব হোসেন জানান, ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি লেখা লিখে আনতে দিয়েছিলো কিন্তু সে অন্য একটি লেখা লিখে নিয়ে যাওয়ায় এমন মারপিট করেছে। ছেলে বাড়িতে এসে এসব বিষয় ভয়ে জানায়নি। সোমবার আমি মোবাইলে ভিডিওটি দেখে আৎকে উঠি এবং ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঘটনা শুনতে চাই। ছেলে হুজুরের ভয়ে আমাদের বিষয়টি জানায়নি। ছেলে জানায়, এই নির্যাতনের কথা কাউকে বললে একেবারে মেরে ফেলবে বলে হুজুর শাসিয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবু সাইদ জানান, ঘটনাটি প্রায় দেড় দুইমাস আগের। সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের কোন শিক্ষার্থী ছিলো না। যারা ছিলো তারা তৃতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা চলছিলো। তারা আমার সাথে বেয়াদবী করেছিলো তাই তাদেরকে একটু শাসন করেছি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে শাস্তি দিয়ে সংশোধন করে নিয়েছে।

এ বিষয়ে মাদ্রসাটির প্রধান মৌলভি (শিক্ষক) মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক পাথরডুবি বাজারের হাবিবুর রহমানের সন্তান(২৭)। তিনি দেড় বছর থেকে মাদ্রায় শিক্ষকতা করেন। দ্বিতীয় জামায়াতের ওই শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে সোমবার বাদ আছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী লাম মিয়ার জেঠাকে নিয়ে একটা মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে শিক্ষক আবু সাইদকে বহিস্কার করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি, ঘটনার সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ইত্তেফাক/এমআর