বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পদ্মায় স্পিডবোট-ডুবি

অন্ধকারে ঢেকে গেছে সব হারানো মীমের পৃথিবী

আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ১০:২০

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় শিশু মীমের বাবা, মা ও দুই বোন নিহত হয়। এখন আর শিশুটির পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। প্রিয়জনদের হারিয়ে যেন কান্নাও ভুলে গেছে শিশু মীম। অবুঝ এই শিশুকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। শিশুটি এখন কীভাবে, কোথায় থাকবে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে—এ নিয়ে এখন স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত। মীমের কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাদেরও।

এ অবস্থায় তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে মীমের জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মীম বড় হওয়া এবং তার বিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করব বলে এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা দিয়েছি। এদিকে, মীমের পরিবারের চার জনকে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার হাজারো মানুষ চোখের জলে বিদায় দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামে জানাজা শেষে নিহত মনির শিকদারের মা লাইলী বেগমের কবরের পাশে তাদের দাফন করা হয়।

রবিবার রাতে মা লাইলী বেগমের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শেষ বারের মতো মাকে দেখতে ঢাকার মিরপুর থেকে রওনা দেন ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী মনির শিকদার, তার স্ত্রী হেনা বেগম এবং তাদের তিন শিশু কন্যা সুমী, রুমি ও মীম। পথিমধ্যে কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় নিহত হয় মনির শিকদারের বড় মেয়ে মীম (৯) ছাড়া বাকি চার জন। এর আগে একসঙ্গে একই পরিবারের এত জনের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেনি তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামের মানুষ। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু মীমকে ঘিরে ছিল আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামবাসীর শোকের মাতম। এমন শোকাবহ অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টায় নিহত চার জনের জানাজায় ছিল পারোখালী গ্রামসহ এলাকার সর্বস্তরের হাজারো মানুষের অশ্রুসিক্ত উপস্থিতি। পরে সারিবদ্ধভাবে তাদের মরদেহ দাফন করা হয় রবিবার রাতে মৃত্যু হওয়া মনির শিকদারের মা লাইলী বেগমের কবরের পাশে।

দাউদকান্দিতে শ্যালক-ভগ্নীপতির লাশ নিয়ে মাতম

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় দাউদকান্দি উপজেলার মাইথারকান্দি গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে গৌরীপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কাউসার (৪২) ও তার শ্যালক একই গ্রামের নুরু মিয়ার পুত্র রুহুল আমীন (৩০) দুর্ঘটনায় মারা যান। রুহুল আমীনের ভাই ইসমাইল প্রাণে বাঁচলেও আহত অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এলাকায় তাদের লাশ আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশ নিয়ে মাতম করেন স্বজনরা। গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে রাতেই পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এদিকে, গৌরীপুর বাজারের অপর ব্যবসায়ী তিতাস উপজেলার ইউছফপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানও এই দুর্ঘটনায় নিহত হন।

No description available.

এক আত্মীয়ের কোলে মীম [ছবি: ইত্তেফাক]

বরিশালে চার জনের দাফন সম্পন্ন

বরিশাল অফিস ও মেহেন্দিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের চার জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় উলানিয়া করোনেশন স্কুল মাঠে সাইফুল ইসলাম এবং দুই সহোদর সাইফুল হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় পাতারহাট হাইস্কুল মাঠে মু?নির চাপরা?শির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে তাদের মরদেহ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

তাহেরকে হারিয়ে নির্বাক পরিবার

টেকেরহাট (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, পদ্মায় নিহত মাদারীপুর জেলার রাজৈরের তাহের মীরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত তাহের মীর (৩৫) রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শংকরদী গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে । মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। সে ঢাকার উত্তরায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল তাহের। তাকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন সংসারের সব সদস্য।

ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত উপজেলার ৪ নম্বর ইকড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পশারীবুনিয়া গ্রামের (বোথলা) রঞ্জন অধিকারীর ছোট ছেলে জনি অধিকারীর (২৫) শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে দুর্ঘটনায় নিহত বরিশালের রুপাতলী জাবুয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মানজুরুল ইসলাম বাপ্পীকে (১৭) মঙ্গলবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তিনি উপজেলার ২ নম্বর নদমুলা শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরখালী গ্রামের দিনমজুর অহিদুল ইসলামের ছোট ছেলে।

ইত্তেফাক/এমআর