শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মোংলা বন্দরের সাবেক সিবিএ নেতা পল্টুর বিরুদ্ধে

দুর্নীতি প্রমাণের পরও ব্যবস্থা নেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ

আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ০১:০৮

কাজী খুরশিদ আলম পল্টু মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের প্রতাপশালী এক সাবেক নেতা। কর্মরত আছেন বন্দরের হারবার কঞ্জারভেন্সী বিভাগে।সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এই নেতা চাকুরীরত অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে থেকে আবার দেশে ফিরে বেতন-ভাতা উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার সত্যতাসহ প্রমাণও মেলে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
 

সাবেক সিবিএ নেতা পল্টুর বিরুদ্ধে গত ২০২০ সালে ৭ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর আগে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। 

নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, মোংলা বন্দরে হারবার কঞ্জারভেন্সী বিভাগে শিপ মুভমেন্ট এ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিরত পল্টু। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ছুটি না নিয়ে গত ২০১২ সালে ১৯ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ইতালিতে অবস্থান করেন। সেখানে ১২৪ দিন থাকার পর দেশে ফিরে বিদেশে অবস্থানের বিষয়টি গোপন করে অসুস্থতার ভুয়া মেডিকেল সনদপত্র দেখিয়ে আবার চাকরিতে ফিরেন এবং একই সাথে বিদেশে থাকা চার মাসেরও অধিক সময়ের বেতন ভাতাও উত্তোলন করেন তিনি।
 
এ নিয়ে বন্দর এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের দাবি উঠে। এরমধ্যেই তিনি হঠাৎ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের (সিবিএ) নেতা বনে যান। নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। নেতৃত্বের প্রভাব খাটিয়ে ওই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন তিনি। পরবর্তীতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে গত ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দেন বন্দর ব্যবহারকারী মো: হাবিবুর রহমান। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো: সাইফুল ইসলাম ঘটনাটি তদন্তের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো: শাহজাহানকে নির্দেশ দেন।


 
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে চেয়ারম্যান শাহজাহান ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিকল্পনা প্রধান শেখ মাসুদউল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি অভিযুক্ত কাজী খোরশেদ আলম পল্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি চাকরিরত অবস্থায় ছুটি না নিয়ে বিদেশে অবস্থানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর তদন্ত কমিটি ঢাকার মালিবাগের ইমিগ্রেশন প্রশাসন থেকে পল্টুর বিদেশে যাওয়ার পাসপোর্ট ও ভিসা উদ্ধার করে এবং ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়ে তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার বিদেশ গমন ও ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার প্রমাণ পায়।
 
পরবর্তীতে তদন্তে তাকে পলায়নের দায়ে দোষী সাব্যস্থ করে তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো: শাহজাহান বরাবরে অফিস আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। 

তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো: শাহজাহান তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বন্দরের পরিচালককে (প্রশাসন) তদন্ত প্রতিবেদনের নথি ফাইলে ফুট-আপ দেওয়া হয়, এরপর আমি চট্টগ্রাম বন্দরে বদলি হয়ে আসি। বর্তমানে দায়িত্বরত চেয়ারম্যানই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
 
এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, সাবেক সিবিএ নেতা কাজী খুরশিদ আলম পল্টুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে, চেয়ারম্যানের অনুমোদন পেলেই মামলা দায়ের করা হবে।
 
এদিকে সিবিএ নেতা থাকাকালীন পল্টুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমি বরাদ্দ নীতিমালা তোয়াক্কা না করে বেআইনিভাবে বন্দর এলাকায় মার্কেট নির্মাণসহ স্বজনপ্রীতি করে আত্মীয়-স্বজনদের নামে বন্দরের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি। এছাড়া বন্দরের নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি ও দামী গাড়ি কিনেছেন তিনি। এছাড়া সিবিএ নেতা থাকাকালীন ২০১৮ সালে পল্টু বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন খুলনাস্থ নৌ বাহিনীর স্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষা বানচালের জন্য হামলা ও ভাংচুর চালায়। এ ঘটনায় তখন তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়।
   
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী খুরশিদ আলম পল্টু বলেন, আপনাদেরকে আমি কেন বলবো? যা বলার তা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। 

ইত্তেফাক/এসজেড