শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৩০ লাখ টাকার জমি দান করে বিদ্যালয়ের বিলুপ্তি ঠেকালেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক 

আপডেট : ১৭ জুন ২০২১, ১৬:৫৭

নীলফামারী-ডোমার সড়ক প্রশস্তকরণে শালমারা বন্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ সকল জায়গা সরকার আয়ত্তে নেয়। এতে বিদ্যালয়ের আর কোনো জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়টি বিলুপ্ত করার সিন্ধান্ত নেয় উপজেলা শিক্ষা কমিটি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশের অন্যান্য বিদ্যালয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। 

তবে বিদ্যালয় বিলুপ্তের বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি ওই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদিশ চন্দ্র রায়। কোনভাবেই যখন বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেই সময় তিনি বিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের নিজের ২৭ শতক জমি দান করে দেন।


 
বুধবার (১৬ জুন) বিকালে সাব-রেজিষ্ট্রি কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মোস্তাফিজার রহমান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমীর হোসেনসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে ২৭ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন জগদিশ চন্দ্র রায়। আর এতেই প্রাণের প্রতিষ্ঠান শালমারা বন্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিলুপ্তি আটকে দিলেন সাবেক প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টি টিকে থাকায় মহা খুশি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ গোটা শালমারা এলাকার মানুষ। সেই সাথে সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদিশ চন্দ্র রায়েকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মহামায়া দেব বর্মা জানান, ১৯৮৯ সালে এলাকার কিছু মানুষ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৯৬ সালের বিদ্যালয়ের নিবন্ধন হয়। যা ২০১৩ সালের জাতীয়করণ করে সরকার। ১৯৯০ সালে জগদিশ চন্দ্র রায় প্রধান শিক্ষক হিসাবে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। আর ২০১৮ সালে অবসরে যান।
 
জগদিশ চন্দ্র রায় জানান, ২৮ বছর ধরে আমি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলাম। নিজের সন্তানের মতো করে বিদ্যালয়টি সাজিয়েছি। জমির কারণে বিদ্যালয়টি বিলুপ্ত হবে, তা আমি মানতে পারিনি। সেজন্য সিন্ধান্ত নেই যত মূল্যবান জমিই হোক না কেন, বিদ্যালয়টির বিলুপ্তি বন্ধে আমি জমি দান করবো। জমি দানের বিষয়টি পরিবারের সকলের সাথে আলোচনা করলে, সবাই আমাকে জমি দানে উৎসাহ দেয়। আমার দেওয়া জমিতে বিদ্যালয়টি টিকে থাকায় মনে হচ্ছে, নিজের সন্তানকে বাঁচাতে পেরেছি।


 
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমীর হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের উপর দিয়ে সড়ক প্রশস্তকরণের জমির অভাবে বিদ্যালয়টি বিলুপ্তের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদিশ চন্দ্র রায় জমি দান করায় বিদ্যালয়টি আর বিলুপ্ত করা হবে না। 

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ জানান, জগদিশ চন্দ্র রায় মহান একটি কাজ করেছেন। তিনি সাবেক এ প্রধান শিক্ষকের মহৎ কাজে নিজেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং সমাজের সকলকে এ মানুষটিকে অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইত্তেফাক/এসজেড