মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নারায়ণগঞ্জে এটিএম বুথ থেকে আড়াই কোটি টাকা লুট

আপডেট : ১৭ জুন ২০২১, ২১:৩৭

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা লুট হয়েছে। ১০ বছর ধরে ৬৩৭টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা লুট হয়। আর লুট করতে লেনদেন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৩টি। 

জালিয়াতির মাধ্যমে এসব লুটের সঙ্গে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঢাকার এডিসি ডিভিশনের সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকে কর্মরত থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীসহ অন্যান্য সহযোগীকে দিয়ে এটিএম বুথে লেনদেন করাতেন। লেনদেনের পর এটিএমের ইলেকট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে দিতেন। এর ফলে টাকা উত্তোলনের পরও ব্যাংকের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সার্ভারে বুথ থেকে টাকা বের না হওয়ার তথ্য পৌঁছাতো। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম মঙ্গলবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শাহারুজ্জামানের স্ত্রী সায়মা আক্তারসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। অন্য তিনজন হলেন আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। তাদের কাছ থেকে চারটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। শাহারুজ্জামান আত্মগোপনে আছেন। তিনি দেশের বাইরে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেয় অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

হাফিজ আক্তার বলেন, ২০১০ সাল থেকে শাহারুজ্জামান ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় অর্থ আত্মসাৎ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আত্মগোপনে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই চক্র ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ এলাকার বহুল শ্রমিক-সংবলিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলায়। এরপর তাদের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এটিএম কার্ড সংগ্রহ করে। কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে না দিয়ে চক্রের সদস্যরা নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। পরে ওই কার্ডের অ্যাকাউন্টে নিজেরা ১০-২০ হাজার টাকা জমা রাখতেন। কিছুদিন পর এটিএম বুথ থেকে তারা টাকা উত্তোলন করতে যেতেন।

তিনি আরও বলেন, টাকা উত্তোলনের ১-২ মিনিট আগে শাহারুজ্জামানকে ফোন করে এটিএমের তথ্য জানাতেন। এরপর শাহারুজ্জামান সেন্ট্রাল মনিটরিং সার্ভার থেকে ওই এটিএমের যোগাযোগ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দিতেন। ওই সময় কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হলেও তা ব্যাংকের সেন্ট্রাল সার্ভারে উত্তোলন হয়নি বলে দেখাতো। টাকা উত্তোলন হয়নি এমন পরিবর্তিত জার্নাল তৈরি করতেন শাহারুজ্জামান। গ্রাহকের আড়ালে থাকা চক্রের সদস্যরা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের পরও ব্যাংকের কাছে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করতেন। 

অভিযোগে বলতেন, অ্যাকাউন্ট থেকে তার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, অথচ তিনি টাকা পাননি। এই অভিযোগের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেন্ট্রাল মনিটরিং সার্ভারে জার্নাল চেক করে টাকা উত্তোলন না হওয়ার তথ্য দেখে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দেয়। এভাবে চক্রের সদস্যরা বারবার এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করে নিতেন। পুরো প্রক্রিয়ায় অপরাধ আড়াল করে ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য করতে তারা বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিতেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের অডিটে গিয়ে জালিয়াতির চিত্রটি দীর্ঘদিন পরে ধরা পড়ে। ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে গত বছর ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এসব টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চলতি বছর ৮ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।


ইত্তেফাক/এমএএম