শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় বিপর্যস্ত রাজশাহীর নিম্ন আয়ের মানুষ

আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৪:১১

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। কর্ম হারিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে দিনাতিপাত করছে এসব মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান লকডাউনে দিনমজুর থেকে শুরু করে গৃহকর্ম, সেলুন, বিউটি পার্লার, ভাঙড়িপট্টি, ক্ষুদ্র কারখানা, বাস-ট্রাকের বডি তৈরি এবং ইঞ্জিন পার্টস, অটোমোবাইল, ডেন্টিং-পেন্টিং, লাইটিং ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখ লাখ মানুষের কর্ম তথা উপার্জন বন্ধ। এসব মানুষের সংসারে এখন চরম বিপর্যয়। শহরের শহিদ কামারুজ্জামান চত্বর, ভদ্রা স্মৃতি অম্লান, তালাইমারী, লক্ষ্মীপুর, কোর্টবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোরে একটা কাজের আশায় জড়ো হয় হাজার হাজার দিনমজুর। কিন্তু কে দেবে এত মানুষের কাজ! জীবন-জীবিকার টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত এসব মানুষ আর লকডাউন চান না। জীবনের চেয়ে অনেকেই জীবিকা বেছে নিতে ইচ্ছুক। তাই তো কঠোর লকডাউনেও রাস্তায় ক্রমশ বাড়ছেই নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড়।

রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আইয়ুব আলী তালুকদার বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা হারিয়ে তিনি এখন অর্থকষ্টে দিশেহারা। তার সমিতির শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন এভাবে আর কত দিন। নগরীর তালাইমারী এলাকার গৃহকর্মী আনোয়ারা খাতুন বলেন, আগে দুটি বাসার কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকা পেতেন। কিন্তু লকডাউনে একটি বাসার কাজ ছুটে গেছে। বাকি একটি বাসার কাজের আয়ে কোনো মতে চার সদস্যের পরিবার চলছে।

১৭ মার্চ বন্ধ থাকবে - banglanews24.com

নিম্নআয়ের কিছুটা ওপরে যাদের অবস্থান, সেই নিম্ন মধ্যবিত্তরাও রয়েছেন গভীর সংকটে। তারা না পারছেন আয়ের ধারাকে সচল রাখতে; না পারছেন হাত পাততে। সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে টিসিবির ট্রাকের সামনে কথা হয় ফুটপাতের ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, আগের দিনও তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু পেছন থেকে ট্রাকের সামনে আসার আগেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। তাই আজ সকালে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সারোয়ার বলেন, লকডাউনে দোকান-ব্যবসা বন্ধ। নিম্ন বলুন আর নিম্ন মথ্যবিত্ত বলুন সমস্যা সবার।

রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অনির্বাণ ভদ্র জানান, নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে ওএমসের চাল-আটা বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্রেতারা জানান, এসব ট্রাক ও পয়েন্টে মানুষের ভিড় এতই বেশি যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চাল-আটা ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক মানুষকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। একই চিত্র টিসিবি বিক্রয় ক্রেন্দ্রেও।

রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে ১২ হাজার ২২০টি কর্মহীন পরিবারের প্রত্যেককে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী হিসেবে ১০ কেজি চাল ও ১ কেজি ডাল দিয়েছেন। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের ৮৫ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন চাল কর্মহীন ৮ হাজার ৫৫৫টি পরিবারকে দিয়েছেন।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল জানান, কঠোর বিধিনিষেধে কর্মহীন মানুষের পাশে রয়েছে পুরো জেলা প্রশাসন। সাধারণ মানুষের যেন খাবারের অভাব না হয়, এজন্য দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকার প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ নগদ টাকা, ত্রাণ হিসেবে ৮৯০ মেট্রিক টন চাল ও ভিজিএফ হিসেবে প্রায় ১ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব সহায়তা সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৯৬০ পরিবারের ৩ হাজার ৯২০ জন ৩৩৩ নম্বরে কল করে সহায়তা পেয়েছেন।

ইত্তেফাক/বিএএফ