বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আরও একটি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৩২

চালু হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু। অক্টোবরে চালু হচ্ছে পায়রা (লেবুখালী) সেতু। এ সেতু উদ্বোধন হলে দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত চালু হবে ফেরীবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পায়রা সেতুটি চলতি বছরের অক্টোবর মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। 

পায়রা সেতুর ‘ক্লোজিং সেগমেন্ট’ ঢালাইয়ের মাধ্যমে পায়রা বন্দরসহ পটুয়াখালী-কুয়াকাটার সঙ্গে বরিশালসহ সারাদেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। এক সময় বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে ফেরী ছিলো ৬টি, যার ৫টিতে ব্রিজ আগেই চালু হয়েছে। সর্বশেষ পায়রা সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা হবে ফেরীবিহীন যোগাযোগ মাধ্যম। আগে যেখানে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগতো ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। আর সর্বশেষ পায়রা সেতু চালু হলে সেখানে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এই ফেরীবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দরে পর্যটন কেন্দ্রের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সেই সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন হবে। ইতোমধ্যে পায়রা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের বেশ কিছু মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে।

                      No description available.

পায়রা সেতু চালু না হলেও প্রতিদিন সন্ধ্যায় এর দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা দেখতে ভিড় জমান এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। তারা জানান, সেতু এখনও চালু হয়নি, তবে সেতুতে ওঠার থেকে দূর থেকেই ভালো লাগছে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে শেষ সেতু এটি। তবে সাধারণ মানুষের জন্য এই সেতু আশীর্বাদ। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখেই মুগ্ধ হচ্ছেন আগতরা। লেবুখালী ফেরিঘাট এলাকায় সেতু দেখতে আসা বরিশাল নগরীর বাসিন্দা রাতুল আহমেদ জানান, ফেসবুকে সেতুর ছবি দেখে সেতু দেখতে এসেছি। সেতু যেদিন চালু হবে সেদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভিতরের সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছা রয়েছে।  

পায়রা সেতুতে পদ্মা সেতুর চেয়েও ৫০ মিটার বড় দুটি স্প্যান বসছে। নান্দনিক এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার সেতুর নদীর মাঝে মূল অংশ ৬৩০ মিটার। এজন্য ২০০ মিটারের ২টি স্প্যান ও দুইপাশে ২টি ১১৫ মিটার স্প্যান বসানো হয়েছে। যা দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতুর স্প্যানের চেয়েও বড়। চার লেন বিশিষ্ট ১ হাজার ৪৭০ মিটার (৪,৮২০ ফুট) দৈর্ঘ্য ও ১৯.৭৬ মিটার (৬৪.৮ ফুট) প্রস্থের এক্সট্রা বক্স গার্ডার ব্রিজটির উভয় দিকে ৭ কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক।

শুরুতে সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এছাড়াও সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হয়েছে সেতুটি। ২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় পায়রা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে এবং ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, এই পর্যন্ত সেতুর ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ওভারওয়াল প্রগ্রেস ৯২ শতাংশ। আগামী মাসের (অক্টোবর) শুরুর দিকে সেতু উদ্বোধন ও গাড়ি চলাচলের জন্য অবমুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্টসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সেতুর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছেন। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শেষ করতে। 

ইত্তেফাক/এসআই