বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:২৮

চলতি বছরে আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে।

শারদীয় দুর্গা উৎসবকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় অর্মল্য চন্দ্র রায় তার নিজ বাড়িতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার বৈদ্দের বাজার এলাকার মৃৎশিল্পী তপনা চন্দ্র মালাকার, অজয় চন্দ্র রায়, বিপিন চন্দ্র রায়, সনজিৎ চন্দ্র রায় ও বাবলু চন্দ্র রায়সহ প্রায় ১০টি মৃৎশিল্পী পরিবার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

মৃৎশিল্পীরা মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের দুশ্চিন্তা থাকলেও আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমার কারণে আনন্দ-উৎফুল্ল হয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন তারা।

সেইসঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি দেন এবং প্রতিমা তৈরির জন্য মৃৎশিল্পীদের অর্ডার করায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলা জুড়ে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারি দেওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরাও ছাড়াও বাড়তি চার-পাঁচ জন শ্রমিক নিয়ে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। দুর্গা উৎসব আসলে মৃৎশিল্পীদের কদর বাড়ে। অন্য সময় তারা কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় কাজকর্ম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

ছবি: ইত্তেফাক

বৈদ্দের-বাজার এলাকার মৃৎশিল্পী তপন চন্দ্র মালাকার ও বিপিন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজখবর নেয় না। প্রতি বছর দুর্গা উৎসব আসলে কয়টা টাকার মুখ দেখি। তারা দুই জনেই এ বছর ৮টি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই দু’জনেই ৪টি প্রতিমা বিক্রি করেছেন। প্রতিমার মূল্য ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। সব খরচ মিটিয়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা করে দু’জনেই আয় করবেন।’  

ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার মৃৎশিল্পী অমূল্য চন্দ্র রায় জানান, এই বছর তিনি ৫টি প্রতিমার কাজ পেয়েছেন। তিনি ৫টি প্রতিমা বিক্রি করে আয় করবেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। 

ফুলবাড়ী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কার্ত্তিক চন্দ্র সরকার ও রাজারহাট উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্র নাথ কর্মকার জানান, ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ফুলবাড়ীতে সম্ভাব্য তালিকা ৬৮ টি ও রাজারহাট উপজেলায় সম্ভাব্য ১২০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করবো।

তিনি আরও জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুচিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। 

কুড়িগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবি বোস জানান, এ বছর কুড়িগ্রাম জেলায় মোট সম্ভাব্য তালিকা অনুযায়ী ৫০৫টি পূজা মণ্ডপে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবছর মা দেবী দুর্গার আগমণ ঘটবে ঘোটকে আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। 

তিনি আরও জানান, শারদীয় দুর্গা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় সকলের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা পাইনি। তারপরেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। 

শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ করতে বিভিন্ন ধরনের দিক নিদের্শমূলক আলোচনাসভা করা হবে। এছাড়াও শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসন সবসময় মনিটরিং করবে এবং পুলিশ বাহিনীসহ কয়েক স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে। 
 
ইত্তেফাক/এএএম