মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরকারি জমি দখল করে ‘প্লট ব্যবসা’

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৩৯

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের  সরকারি রাস্তার প্রায় দুই একর জায়গা দখলে নিয়ে ‘হাওর মালেক সিটি’ নামে ‘প্লট ব্যবসা’ করার অভিযোগ উঠেছে মোল্লা ট্রেডিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিক অভিযোগ করেছেন খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ছানোয়ারুজ্জামান জুসেফ ও খালিয়াজুরী সদরের ছমির মিয়ার ছেলে এরশাদ মিয়া। তবে, অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছে মোল্লা ট্রেডিং লিমিটেড। একইসঙ্গে প্লটের জমিকে নিজেদের জায়গা বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।  

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০ বছর আগে খালিয়াজুরী সদরে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কয়েক একর জায়গা কেনেন মোল্লা ট্রেডিং লিমিটেড। ওই জায়গা কেনার পর এর পাশে আরও প্রায় দুই একর সরকারি খাস জায়গায় খুঁটি বসিয়ে নিজেদের দখলে নিয়ে নেন।  পরবর্তী সময়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে বালু অবৈধভাবে ভরাটের মাধ্যমে জায়গাটিকে উঁচু ভূমিতে পরিণত করেন মোল্লা ট্রেডিং লিমিটেডের মালিক মোল্লা মাজহারুল মালেক। বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি টাকা বাজার মূল্যের সরকারি রাস্তার এই জায়গা খালিয়াজুরী মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের ৪৪৮৯ ও ৪৭০০ দাগে অবস্থিত। 

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বালু ভরাটের মাধ্যমে সরকারি রাস্তার এই জমি দখল করে মোল্লা মাজহারুল মালেক জায়গাটির নামকরণ করেছেন ‘হাওর মালেক সিটি’। এই সিটিতে তাদের নিজস্ব কিছু কেনা জমি থাকলেও এখানে বেশ কয়েক একর রয়েছে সরকারি খাস এবং অর্পিত ও অনিবাসী সম্পত্তি। অবৈধভাবে দখল করা এসব জমিতে প্লট তৈরি করে বিক্রি করছেন মোল্লা মাজহারুল মালেক। যারা এ জমি কিনছেন, তাদের কেউ কেউ মূল্য অনুযায়ী প্রায় সব টাকা পরিশোধ করে দুই বছর ধরে ঘুরেও মালিকানার দলিল পাননি। 

ডিসি অফিসে অভিযোগকারী ছানোয়ারুজ্জামান জুসেফ ও এরশাদ মিয়া বলেন, ‘সরকারি জায়গা থেকে অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানাই।’ তারা আরও বলেন, ‘যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণসহ টাকা ফেরত দিতে হবে।’ 

যারা দলিল পাননি তাদের একজন খালিয়াজুরী সদরের  প্রণব সরকার । তিনি বলেন, ‘আমি ৪ বছর আগে হাওর মালেক সিটির প্রতি শতাংশ জমি একলাখ টাকা দরে ৭ শতাংশ জমি ৭ সাত লাখ টাকায় কিনেছি। এরপর ২ বছরের মধ্যেই পরিশোধ করেছি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাকি ৪০ হাজার টাকা হাওর সিটি কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে আর নিচ্ছে না।  দলিলও করে দিচ্ছে না।’

No description available.

হাওর মালিক সিটির প্লট

প্রণব সরকার আরও বলেন, ‘জমি বিক্রির নামে টাকা নিয়ে দলিল করে না দিয়ে অন্তত ১৫ জন ক্রেতার সঙ্গে করেছে প্রতারণা করেছে হাওর সিটি।’

খালিয়াজুরী সদরের কিতাব আলী মিয়া, রিমন মিয়া, নিত্যানন্দ ঋষি ও আরাধন সরকার বলেন, ‘হাওর সিটির মালিক একই এলাকায় আরেক রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে মার্কেটও তৈরি করেছেন। ওই মার্কেটে ২০টি দোকান তৈরি করে প্রতিটি দোকান থেকে তারা নিরাপত্তা তহবিলের নামে অগ্রিম নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। এসব দোকানের প্রতিটির মাসিক ভাড়া নিচ্ছেন দেড় হাজার টাকা করে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে মোল্লা মাজহারুল মালেক বলেন, ‘আমার বাবা প্রায় ২০ বছর আগে খালিয়াজুরীতে হাসপাতাল নির্মাণের সময়  এখানে জায়গা কিনেছেন। তবে আমরা কোনো সরকারি জায়গা দখল করিনি। কখনো কারও সঙ্গে প্রতারণাও করিনি। আমাদের দখলে যেসব জায়গা রয়েছে, সব জায়গায়ই আমাদের  নিজস্ব সম্পত্তি।’
 
মোল্লা মাজহারুল মালেক আরও বলেন, ‘জুসেফ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় কিছু লোক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

খালিয়াজুরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন খন্দকার জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।

No description available.

হাওর মালিক  সিটির মার্কেট

তবে, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শেখ মতিউর রহমান বলেন, ‘হাওর মালেক সিটি কর্তৃপক্ষ সরকারি জায়গা দখল করেছে, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।  তদন্তকালে জায়গা পরিমাপ করে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এছাড়া, দখল করা ওই সরকারি জায়গা থেকে সম্প্রতি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুটি স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৎপরতা চলছে।’

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘খালিয়াজুরীতে সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ পাওয়ার গেছে।’ বিষয়টি তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও ডিসি জানান।
 

ইত্তেফাক/এনই/ইউবি