নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর প্রায় সকল সড়ক এখন হকারদের দখলে। এই সব সড়কে হকার বসিয়ে রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ স্থানীয় মাস্তানরা প্রতি মাসে কোটি টাকা আয় করছে। শহরের আলোচিত মীর জুমলা সড়কটি মুক্ত করতে নগরবাসী থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কর্মীরা আন্দোলন সংগ্রাম করার করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু দিন আগে প্রশাসনিক উদ্যোগে সড়কটি চলাচলের উপযোগী হলেও এখন তা আবার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আর ভ্রাম্যমাণ হকারদের দখলে।
এখানে সড়কের ওপর ছোট ছোট টংঘর করে দৈনিক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে একটি মহল। এই সড়কে হাতে করে মুরগি বিক্রি করতে হলেও চাঁদা দিতে হয়। এভাবে শহরের সড়ক দখল করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে চলেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ও সিটি করপোরেশনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের লোকজন।
শহরের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এ সড়কে অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে থাকে। তাই শহরবাসীর কাছে প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত এটি। চাঁদাবাজরা ভোর পাঁচটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কের অন্তত হাজার খানেক স্পট ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে। আর সেই সুযোগে সড়কে বসে নানা পণ্যের পসরা। সে কারণেই শহরের অধিকাংশ সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব এই সব হকারদের উচ্ছেদের কথা থকলেও উলটো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশকে হকারদের উচ্ছেদে মাঝে মধ্যে তৎপর দেখা গেলেও মীর জুমলা সড়ক থেকে শুরু করে শহরের অধিকাংশ সড়কেই চাঁদাবাজি করে চলেছে নাসিকের জনপ্রতিনিধিদের সমর্থনপুষ্টরা। কোনো কোনো সময় পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও রহস্যজনক কারণে আবার তারা চুপসে যায়।
জানা গেছে, সড়ক ও ফুটপাত ভাড়া দিয়ে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে রয়েছে নানা হিসাব। এলাকার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় চাঁদার হার। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিতাইগঞ্জে আসা পণ্যবাহী গাড়ির মালপত্র খালাস করে ফেরার পথে সেখানে চাঁদা দিতে হয়। ডিআইটি মসজিদের সামনে আরেক ছদ্মবেশীরা টাকা আদায় করে। মন্ডলপাড়ায় বাঁশ দিয়ে এক পাশ বন্ধ করে অবৈধ ইজিবাইকের স্ট্যান্ডের চালকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় চাঁদা। রাতে চোরাই পণ্য বিক্রয়কারীদের কাছ থেকে সেখানে আরেক দফা চাঁদা নেওয়া হয়।
করিম মার্কেটের পেছনে পুরো সড়ক পসরা সাজানোর জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে ভাসমান দোকানদারদের। দুই নম্বর গেটে এপার ওপার শুধুই চলছে টাকার খেলা। দর্জি থেকে শুরু করে পুরান জুতা বিক্রেতা সবার কাছ থেকেই নেওয়া হয় চাঁদা। উকিলপাড়ায় প্রতিদিন সড়কে দোকানদারির জন্য ঠিক করা হয় নতুন নতুন হকার। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন দফায় হাত বদল হয় সড়কের জায়গা। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে ও মীর জুমলা সড়কে সকালে জায়গা দেওয়া হয় ঘণ্টা হিসাবে। তারপর দিনভর এই সড়কে দোকানপ্রতি হাজার টাকা চাঁদা তোলে নাসিকের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আত্মীয়। এরপর থেকে চাষাঢ়ার মোড় পর্যন্ত জায়গা নানা চাঁদাবাজদের দখলে।
পুলিশও নিয়মিত বখরা পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ ফুটপাতের একাধিক হকারের। হকার নেতাদেরও দিতে হয় মাসোহারা। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ‘আমরা ফুটপাত হকার মুক্ত রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই কাজ মূলত:সিটি করপোরেশনের হলেও আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিয়মিত হকার উচ্ছেদ চালাচ্ছি। কোনো পুলিশ সদস্য হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নিলে তার প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি