শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বরিশাল-ভোলা-মেহেন্দিগঞ্জ নৌপথে চলছে শত শত অবৈধ স্পিডবোট

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০০

বরিশাল-ভোলা-মেহেন্দিগঞ্জ নৌপথে বিআইডব্লিউটিএর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শত শত স্পিডবোট অবৈধভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করছে। নদীতে এত বেশিসংখ্যক অবৈধ নৌযান চলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, হতাহত হচ্ছেন যাত্রী ও জেলেরা। তারপরও এসব অবৈধ যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদীতে এই অবৈধ যানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, কয়েকটি রুটে চলাচলরত তিন শতাধিক স্পিডবোট থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়ে থাকে। স্পিডবোট মালিকরা এই টাকা আবার যাত্রীদের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল-ভোলা রুটে দেড় শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। বরিশাল নগরীর ডিসি ঘাট ও লাহারহাট থেকে এসব স্পিডবোট ভোলা খেয়াঘাট ও লাহারহাট পর্যন্ত চলাচল করে। এছাড়াও নগরসংলগ্ন তালতলী ব্রিজ এলাকা থেকে মেহেন্দিগঞ্জে অর্ধশত অবৈধ স্পিডবোট চলাচল করে। এসব স্পিডবোটের সিংহভাগই পুরোনো, ফাটা ও জোড়াতালি দেওয়া। পথিমধ্যে পানি ওঠে এবং ইঞ্জিন বিকল হয়ে অনেক সময় আগুন ধরে যায়। অধিকাংশ বোটে নেই লাইফ জ্যাকেট। দুই-একটি বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। এসব নিয়ে যাত্রীরা কথা বললেই চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন। অনেক চালক পথিমধ্যে বোটের ইঞ্জিনে ত্রুটির কথা বলে কিংবা চরে তুলে দিয়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে। এ কারণে ভয়ে এসব অনিয়মের কেউ প্রতিবাদ করেন না—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

স্পিডবোট চলাচলে নিয়ম মানার বালাই নেই | 969142 | কালের কণ্ঠ | kalerkantho

বরিশাল বিআইডব্লিটিএর দাবি, এসব রুটে যেসব স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলোর মধ্যে মাত্র আটটি ছাড়া বাকিগুলোর কোনো সার্ভে সনদ, রেজিস্ট্রেশন এবং রুটপারমিট নেই। অবৈধভাবে চলাচল করা এই নৌযান ঘিরে চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছে। যে কারণে অবৈধভাবে চলাচলকারী স্পিডবোট বন্ধে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ। গত ২৩ আগস্ট চিঠিগুলো দেওয়া হয় বরিশালের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌ-পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটনের বন্দর থানাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচলে যে কোনো সময় যাত্রী সাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধনসহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরিশাল নগরীর ডিসিঘাট-সংলগ্ন কীর্তনখোলা ও লাহারহাটে যেসব স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলোকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। লাহারহাট লঞ্চঘাটে ‘স্পিড বোট মালিক সমিতি’ নামে একটি সমিতি বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের সমিতির কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই বা কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই। তিনি বলেন, স্পিডবোট চলাচল করতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে সার্ভে সনদ, রেজিস্ট্রেশন এবং রুটপারমিট নিতে হবে। তারা বিআইডব্লিটিএ থেকে সময়সূচি নেয়নি, আবেদনও করেনি। আটটি স্পিডবোর্ড যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন জানান, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে কোনো কাগজপত্র তিনি পাননি। এছাড়াও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আসেনি। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশালের লাহারহাট থেকে গোপনে চলছে স্পিডবোট: দুর্ঘটনার আশঙ্কা । বরিশালটাইমস

স্পিডবোট মালিক-শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ডিসি ঘাট এলাকায় প্রশাসনের অভিযানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের পর তাদের নদীতে চলাচলে অনুমতি নিতে বলা হলে তারা সে অনুযায়ী আবেদন করেছেন। তিনি জানান, প্রায় ৪০টি স্পিডবোট ও চালকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা সার্ভে সনদের জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে জমা দিয়ে স্পিডবোট পরিচালনা করছেন। চালকদের ডোপটেস্টও ইতিমধ্যে করা হয়েছে। খুব শিগিগরই অনুমতি মিলবে বলে তিনি জানান। বর্তমানে বরিশাল ডিসি ঘাট থেকে ভোলায় যাতায়াতকারী একেকটি স্পিডবোটে আট জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৩০০ টাকা।

জানা গেছে, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে লাহারহাট পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা। এ রুটে একেকটি স্পিডবোটে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী ঠাসাঠাসি করে নেওয়া হয়। বরিশাল নগরী থেকে ভোলা পর্যন্ত যেতে ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা। আর বোট রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া আদায় করা হয় ৫ হাজার টাকা। স্পিডবোট রিজার্ভ করে বরিশাল-ভোলা যাতায়াত করেন মূলত চিকিত্সকরা। প্রতিদিনই ১০-১২টি স্পিডবোট ভোরে রিজার্ভ করে চিকিত্সকরা ভোলায় যান। আবার তারা সন্ধ্যার পরে ভোলা থেকে রিজার্ভ বোটে ফিরে আসেন। এছাড়াও কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অধিক লাভের আশায় রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েকটি স্পিডবোট চলাচল করে থাকে।

জেলেরা জানান, ভোলা-বরিশাল রুটে তিনটি নদী ও কয়েকটি খাল অতিক্রম করতে হয়। এসব নদী ও খালে কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরেন। স্পিডবোটগুলোর বেপরোয়া চলাচলের কারণে জেলেদের মাছ ধরায় বিঘ্ন ঘটছে, জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে, এমনকি অনেক সময় দুর্ঘটনায় জেলেদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি