বেশ কয়েক বছর আগে কারনেট সুবিধায় আমদানি করা বিশ্বের নামী ও দামি ব্র্যান্ডের ১১৩টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডরোভার, ল্যান্ডক্রুজার, লেক্সাস, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও বিএমডব্লিউ। আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর ইলেকট্রনিক নিলামে (ই-অকশন) এই গাড়িগুলো বিক্রি হবে।
জানা গেছে, এ ধরনের একেকটি গাড়ির দাম সাধারণত ১ থেকে ৪ কোটি টাকা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, নিলামে অংশগ্রহণকারীরা ‘যৌক্তিক মূল্য’ উদ্ধৃত করলেই তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের তুলনায় আশাতীত কম দামে যে কেউ একটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়ে যেতে পারবেন। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে মিৎসুবিসি পাজেরো ২৬টি, মার্সিডিজ বেঞ্জ ২৫টি, বিএমডব্লিউ ২৫টি, ল্যান্ডরোভার ৭টি, ল্যান্ডক্রুজার ৭টি, ১টি সিআরভি, লেক্সাস ৬টি, ফোর্ড ৫টি, জাগুয়ার ৩টি, ১টি দাইয়ু ও ১টি হোন্ডা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, যেহেতু এই গাড়িগুলো নামিদামি ব্র্যান্ডের এবং উচ্চতর সিসি-সম্পন্ন, তাই এগুলোর শুল্ক-করের পরিমাণ ও সংরক্ষিত মূল্য অনেক বেশি ছিল। সংরক্ষিত মূল্য বেশি হওয়ায় আমরা এর আগে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির চেষ্টা করেও সফল হইনি। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় গাড়িগুলো বন্দরের জায়গাও দখল করে রেখেছে। বন্দরের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় আমরা নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি ভালো সাড়া পাব। সংরক্ষিত মূল্যে হয়তো সবকিছু বিবেচনা করা যাবে না। তাই যদি কেউ গাড়ির যৌক্তিক মূল্য উদ্ধৃত করেন, আমরা সেগুলো বিশেষ বিবেচনায় নেব এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি অনুমোদন করানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পর্যটক-সুবিধার সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটকেরা। তবে শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করায় গাড়িগুলো আটকে দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাসের শর্ত আরোপ করে দেওয়া হলেও পর্যটকেরা গাড়িগুলো আর খালাস করেননি। ফলে দামি এই গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরেই পড়ে থাকে।
আগ্রহী কেউ গাড়িগুলো দেখতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের ছবিসহ চট্টগ্রাম কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে পাশ নিতে হবে। গাড়ি পরিদর্শনের তিন দিন আগে পাশের আবেদন করতে হবে। গাড়ি পরিদর্শনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৭ থেকে ২৮ অক্টোবর এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর। গাড়ি কেনার জন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলামে অংশ নেওয়ার সময় শিডিউলের সঙ্গে ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ অথবা টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। টেন্ডার আবেদন খামবন্ধ অবস্থায় জমা দিতে হবে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও মোংলা কাস্টমস অফিসে রাখা টেন্ডার বাক্সে।
অনলাইনে নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতারা চাইলে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আগ্রহী দরদাতাদের আগামী ৩ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ৪ নভেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ওয়েবসাইট www.chc.gov.bd অথবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটের www.nbr.gov.bd ই-অকশন লিংকে ঢুকে দরপত্র দাখিল করতে হবে।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি