বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাড়ে ৩শ মাদক স্পট থেকে কোটি টাকা মাসোহারা, আখাউড়ার ওসি ক্লোজড

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী থানা আখাউড়ার আলোচিত ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদারকে অবশেষে ক্লোজড করা হয়েছে। শনিবার রাতে তাকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা, মাসে কোটি টাকা মাদকস্পট থেকে মাসোহারা উত্তোলন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করা ছাড়াও নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর যোগদান করেন মোশাররফ হোসেন তরফদার। ৩ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়ে যায় ‘তুই তোকারি’র। আখাউড়াকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। তাকে ক্লোজড করার খবরে আখাউড়ার মানুষ উচ্ছসিত।

ওসি মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আখাউড়া পৌর এলাকার সচেতন নাগরিকদের নামে ৩ পৃষ্টার একটি অভিযোগ দেওয়া হয় পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে। ওই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। আখাউড়ার ৫টি ইউনিয়নে সাড়ে ৩শ মাদক স্পট চলার সুযোগ দিয়ে ওসি প্রতিমাসে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা মাসোহারা তুলেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। তাকে টাকা দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছে একাধিক মাদক মামলার আসামি।

ক্রসফায়ার এবং এক হাজারটি মাদক মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে ওসি মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক বছরের বেশি সময় আখাউড়ার অর্ধশত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ওসি ৩৪ ধারায় চালান দিয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা, মামলার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে।

একাধিক মাদক মামলার আসামি কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আখাউড়ার শৌনলোহঘরের সুজন মিয়া, রাজাপুরের উজ্জল মিয়া, বাহার মিয়া, ইকবাল মিয়া, আমির হোসেন, দেবগ্রামের উজ্জল মিয়া-২, হুসেন মিয়া, বচিয়ারার আশরাফুল মুন্সি, বীরচন্দ্রপুরের জামাল মিয়া, রেলওয়ে পূর্ব কোলনীর শাহাব উদ্দিন, মনিয়ন্ধ দক্ষিনপাড়ার শাহআলম, ইমন আলী, মো: রুবেল, মো: আবুল কাশেম, আনোয়ার হোসেন, শ্যামল মিয়া, চান্দির জয়নাল মিয়া, আজমপুরের জহিরুল ইসলাম, নূরপুরের মিন্টু মিয়া, নারায়নপুরের সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ৩৪ ধারায় চালান দেন ওসি। ওই অভিযোগে আরো বলা হয়, ওসি নিজে একটি বিকাশ নাম্বারে এবং আর্থি টেলিকম, কলেজপাড়া কামাল প্রফেসরের দোকান, দুলাল ঘোষের দোকান, রেলস্টেশন সংলগ্ন সুমনের দোকান থেকে বিকাশে মাদক কারবারীদের টাকা গ্রহণ করতো তার লোকজন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন, কনস্টেবল সামদানী, মেস ম্যানেজার শামীম, এসআই মোশাররফ ও হালিম এবং এখান থেকে বদলী হয়ে যাওয়া এএসআই সাদেকুর রহমান।

আখাউড়ার র্শীষ মাদক ব্যবসায়ী হান্নান মেম্বারের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টিও আলোচিত। হান্নান মেম্বারকে গ্রেপ্তারে নির্দেশ থাকলেও ওসি মোশাররফ তাকে গ্রেফতার করেনি। অভিযান চালিয়ে ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ীদেরই গ্রেফতার করে চালান দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার ক্রসফায়ার নিয়েও আছে অভিযোগ। মানিক সুত্রধর নামে এক যুবককে ক্রসফায়ার করার ঘটনা এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। থানার ওসি (তদন্ত) আরিফুল আমিন জানান, ‘ওসি দোতলার একটি রুমে থাকতেন। আমরা কিছু দেখিনি, জানিও না। কতো জনে কতো কিছু বলছে।’ তিনি বলেন, ‘ওসি মোশাররফ হোসেনকে জনস্বার্থে বদলি করা হয়েছে।’

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মোশাররফ হোসেন তরফদার বলেন, ওভার ডিউ হওয়ায় তাকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে। সব অভিযোগ মিথ্যা।’

আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার তদন্ত নিয়ে গড়িমসি

জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান ওসি মোশাররফ হোসেন তফরদারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। 

ইত্তেফাক/নূহু