শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাভারে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩৮

সাভারে নিখোঁজের তিন দিন পর ধলেশ্বরী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতার ভাসমান লাশ। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ধলেশ্বরী নদীর পানপাড়া এলাকায় নিখোঁজ হুমায়ুন কবির সরকারের লাশ ভেসে উঠলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীরা তাকে উদ্ধার করে। নিহত হুমায়ুন কবির সরকার তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এবং স্থানীয় রাজফুলবাড়ীয়া এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও এলাকার অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে স্থানীয় ফারুক হোসেন পারভেজ ও আলমগীর গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সেই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হুমায়ন কবির সরকারকে টেলিফোনে বাসা থেকে ডেকে স্থানীয় রাজফুলবাড়িয়া বাজারে তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে একই এলাকার ফারুক হোসেন ওরফে পারভেজ ও আলমগীরের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩২ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে এবং উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে হুমায়ুন কবির বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীতে লাগ দেন এবং সাঁতরে অপর পাড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ট্রলার নিয়ে ধাওয়া করে পারভেজ ও আলমগীর তাদের লোকজনসহ হুমায়ুনকে ধরে পানির মধ্যেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও টেটা বিদ্ধ করে করে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহটি গুমের উদ্দেশ্যে ভারী বস্তুর সঙ্গে বেঁধে ধলেশ্বরী নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

নিহত হুমায়ুন কবির সরকারের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় সন্ত্রাসী আমিনুল, পারভেজ, আলম, আলমগীর, শুকুর ও হান্নান আমার স্বামীর উপর হামলা চালায়। পরে তাকে স্থানীয় মাছ বাজারে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে তার স্বামী পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদীতে লাফ দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সন্ত্রাসীরা ট্রলারযোগে নদীতে নেমে তাকে কুপিয়ে এবং টেটা বিদ্ধ করে হত্যা করে'।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করলে বৃহস্পতিবার রাতেই সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত নৌকার মাঝি ও তার সহকারীকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হুমায়ুন কবির সরকারকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। আটককৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মৃতদেহটি খুজে পেতে গত দুইদিন ধরে ধলেশ্বরী নদীতে দফায় দফায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দলের সদস্যরা। অবশেষে নিখোঁজের তিন দিন পর রবিবার সকালে পানপারা এলাকায় নদীর তীরে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার মরদেহটি ভেসে উঠে।

আরও পড়ুন:  গৌরীপুর রেলওয়ে কবরস্থানের সংস্কার কাজ শুরু

মামলার বাদী হুমায়ুনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলমের জানান, তার ভাইয়ের হত্যাকারী পারভেজ এর নামে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। পারভেজ ও আলমগীর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের অপকর্মে বাধা দেওয়ায় তাঁরা তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা বলেন, 'নিহতের ছোট ভাই ২১ জনের নাম উল্লেখসহ ৩২ জনের  মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার রাতেই আমিরুল ইসলাম, সজিব,  ট্রলারের মাঝি মোশারফ হোসেন, রুস্তম আলী ও দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাদের ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে আমিরুল ও দেলোয়ারের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সজিব ও মোশারফ হোসেন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় এবং রুস্তম অসুস্থ থাকায় আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন'।

সাভার মডেল থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, 'স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়েছে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ৫ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেরকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে'।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি