ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর গ্রামের বাসিন্দা মোছা জহুরান্নেছা। স্বামী-মৃত উমর আলী। জহুরান্নেছা বয়স ৮২ বছর। এ বয়সেও তার ভাগ্যে জোটেনি কোন বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড।
জহুরান্নেছার দেখা মিলে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায়। বয়সের ভারে তার কোমর বেঁকে গেছে। কুঁচকে গেছে গায়ের চামড়া। এই শরীরেই হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে ধীর গতিতে হেঁটে চলছেন তিনি। হারুন টি স্টলে ঢুকে সেখানে বসে থাকা কাস্টমারদের কাছে সাহায্যের আকুতি জানালেন। সাহায্য করার সূত্র ধরেই কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সংরামের আগেই আমার বিয়া অয়। সংসারে আহে চাইর পোলা ও এক মাইয়া। জামাই তহন তরিতরকারির ব্যবসা কইর্যা সংসার চালাইতো। অভাব থাকলেও সংসারডাত সুখ আছিল। হুট কইর্যা জামাই আরেকটা বিয়া করে। তাই জামাইয়ের ঘর বেশিদিন করা অইলো না। আমি ওইহান থেইক্যা আইয়া পড়ি। হেরপর কষ্ট কইর্যা পোলপাইনডিরে বড় করছি। তয় সংসারের অভাব আর দূর অইলো না। অহন বুইর্যা বয়সেও মাইনষ্যের কাছে হাত পাতন লাগে।’
তিনি মনের কষ্ট প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘ভাবছিলাম পোলাপাইনে আমারে খাওন-খোরাকি দিবো। অভাবের ঠেলায় তো ওরাই নিজের সংসার চালাইতে পারেনা। আমারে কি খাওয়াইবো। কপালডা ভালা এই বইল্যা যে, অভাবের মধ্যেও ছোট পোলা সবদূর আমারে খাওয়ায়। ওর লগেই আমি থাহি। তয় আমার বয়স বাড়নে খাটাখাটনি করবার পারিনা, শইলেও মেলা অসুখ-বিসুখ ধরছে। টেকার অভাবে ভালা ডাক্তরও দেহাইতে পারি না। মাইনষ্যের কাছে হুনি বুড়া অইলে, জামাই মরলে সরকারে বলে ভাতার কার্ড দেয়। কই আমি তো বুড়া থুরথুরা অইয়া গেছি। আমারে তো কেউ ভাতার কার্ড দিলো না।’
শালীহর গ্রামের একটি জরাজীর্ণ ঘরে জহুরান্নেছা বসবাস করেন। তার স্বামী মারা গেছে প্রায় ২০ বছর আগে। চার ছেলে ও এক মেয়ের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। তবে ছোট ছেলে সবদূর ছাড়া কেউ মায়ের খোজঁ-খবর নেয়না। বয়স ভারে ন্যুয়ে পড়া জহুরেন্নাসা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। প্রতিমাসে তার ওষুধ বাবদ এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েই তিনি খরচটা যুগিয়ে যাচ্ছেন।
জহুরান্নেছার বয়স ৮২ হলেও তিনি কোনো বয়স্ক ভাতা পান না। জরাজীর্ণ ঘরে থাকলেও সরকারি ঘরের বরাদ্দ তার ভাগ্য জোটেনি। একবার স্থানীয় ইউপি সদস্য বয়স্ক ভাতা দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিলেও পরবর্তীতে তিনি ভাতা পান নি। তবে গ্রামের মানুষ ধান কাটার মওসুমে তাকে ধান-চাল দিয়ে সাহায্য করে। সেটা দিয়েই কষ্ট করে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ মঠবাড়িয়ায় বলেশ্বর নদে কোস্টগার্ডের ওপর জেলেদের হামলা
জহুরেন্নাছা বলেন ‘যারার লোক আছে, হেরা ভাতার কার্ড পাইছে। আমার লোকও নাই। ভাতার কার্ডও নাই। গেরামের মেম্বাররে জিগাইলে খালি কয় অইবো। কিন্তু কবে যে অইবো হেইডা আর কয় না। কার্ডটা পাইলে তো একটু অইলেও আমার অভাবডা কমতো। এই বয়সে কত কিছু খাইতে-পড়তে মন চায়। তয় সব কিছুর লেইগ্যা মাইনষ্যের কাছে হাত পাততে ভাল্লাগে না।’
ইত্তেফাক/নূহু