শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘দেশ ছাড়, নইলে আবার জেলে ঢোকাবো’

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২২

পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সৃষ্ট মামলায় জামিন পেয়ে বাড়িতে উঠতে পারছেন না সাতক্ষীরার পাঁচটি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা। প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে তাদের জীবিকা, স্কুলে যেতে পারছেনা তাদের সন্তানেরা। শুক্রবার এসব পরিবারের কয়েকজন নারী ও পুরুষ তাদের তল্পিতল্পা নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে নিরাপত্তা চেয়ে এবং বাড়ি ফিরতে সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আখড়াখোলা গ্রামে। প্রেসক্লাবে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন, সাধন সাধু, কার্তিক সাধু, সন্তোষ সাধু ও নিমাই সাধু। সঙ্গে তাদের স্ত্রী চায়না রানী, স্বপ্না রানী, রমা রানী ও লক্ষ্মী রাণী।

তারা অভিযোগ করে বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩০ শতক জমির ওপর তাদের শরিকদের বসবাস ও দোকানপাট। তাদের একজন শরিক দুলাল সাধুর ১০ শতাংশ জমি জবর দখলের লক্ষ্যে পাশের এগারোআনি গ্রামের মো. আলাউদ্দিন সরদার তার ছেলে সুমন সাধুকে অপহরণ করেছিলেন। পরে তাকে জিম্মি করে রেখে দুলাল সাধুর কাছ থেকে ১০ শতক জমি জোর করে লিখে নেন। দুলাল এ ঘটনার পর ভারতে চলে যান। তিনি আর ফেরেন নি। 

গ্রামবাসীরা জানান, জমির দলিল হাজির করে মো. আলাউদ্দিন সরদার ওই জমি দখল করে নেন। এ জমির শরিকদের অভিযোগ আলাউদ্দিন তার ১০ শতক জমির বাইরে দুটি দাগে আরও ছয় শতক জমি জবর দখল করে নিয়েছেন। এর মধ্যে সেখানে দোকান তৈরির লক্ষ্যে আলাউদ্দিন সরদার পাশের শরিক তুলশি সাধুর টালির ছাউনির ঘরের একাংশ জোর করে কেটে ফেলেন। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশ বসে জবরদখল হওয়া জমি ও দোকানঘর তারা ফিরে পান। 

ভুক্তভোগী সদস্যরা জানান, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আলাউদ্দিন ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঝাউডাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রমজান আলি, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ অনেকেই। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। 

গ্রামবাসীরা আরও জানান, আলাউদ্দিন সরদার ওই পরিবার গুলোকে হেনস্থা করার জন্য ৮ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে আরও একটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে আখড়াখোলা গ্রামের তুলশী চরন সাধু, মধুসূদন সাধু, সাধন চন্দ্র, কার্তিক চন্দ্র, দেবচন্দ্র, মিলন চন্দ্র, সন্তোষ চন্দ্র ও নিমাই চন্দ্র সাধুকে। তাদের মধ্যে একজন কলেজ ছাত্রও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আলাউদ্দিনের দোকানের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণ, দোকানের মালামাল ভাংচুর, আলাউদ্দিনকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা, তার স্ত্রীর গলার চেইন ছিনিয়ে নেওয়া  ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত। এই মামলায় আদালতে জামিন নিতে আসা আটজনের মধ্যে সাতজন জামিন পান।  তুলশি চরনকে আদালত জেল হাজতে পাঠান। 

জামিন প্রাপ্তরা জানান, আলাউদ্দিন সরদারের দুই ছেলে সেলিম ও ডালিম তাদের লোকজন নিয়ে লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। বাড়ি ফিরলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। তাদের ভয়ে সাধু পরিবারের লোকজন দোকানপাট খুলতে সাহস করছে না। নিরুপায় হয়ে তারা সাংবাদিকদের জানাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে তল্পিতল্পাসহ চলে এসেছেন। তারা অভিযোগ করে বলে, আলাউদ্দিন তাদের হুমকি দিয়ে বলেছেন ‘ দেশ ছাড়, অন্যথায় সবাইকে ফের জেলে ঢোকাবো। আর বের হতে পারবি না।’  

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে একজন ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। চোরাচালানের পথ ধরে তিনি এখন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী আরও অনেক শরিকের জমি দখল করে নেবেন বলে চেষ্টা করছেন। 

আরও পড়ুন: বরিশালে রাধাগোবিন্দ মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর: স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা লুট

তবে জমি দখল, হয়রানি মূলক মামলা দেওয়া এবং কয়েকজন শরিককে দেশত্যাগের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন সরদার জানান, আমি নিয়ম অনুযায়ী জমি কিনেছি। দুলালের ছেলে অপহরণের বিষয়ে আমি জড়িত নই। আমার পাওনা জমি আমি দখল করছি। হিন্দু পরিবার গুলোর পক্ষ নিয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই জমি হজম করার পাঁয়তারা করছেন। আমি চোরাচালানি ছিলাম না। কোনো ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি তাদের মধ্যে মীমাংসা করতে সালিশ বসিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আলাউদ্দিন সরদার সালিশ মানেননি। বরং তিনি সম্মানিত সালিশদারদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। পুলিশ আইনের পক্ষে আছে জানিয়ে ওসি আরও জানান, আলাউদ্দিন সরদার তাদের কোনো ধরনের হুমকি দিয়ে থাকলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইত্তেফাক/অনি