বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিঠাপুকুরে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, অভিযোগ করায় অবর্ণনীয় নির্যাতন

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৩৮

রংপুরের মিঠাপুকুরে এক প্রতিবন্ধী ভ্যানচালকের স্ত্রীকে (৩৫) পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করলে ধর্ষণের শিকার ওই স্ত্রীকে ও তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ১নং খোড়াগাছ ইউনিয়নের পাকপাড়া ইসলামপুর গ্রামে। পর্যায়ক্রমে ধর্ষণের ঘটনা নায়ক একই এলাকার বাসিন্দা প্রভাবশালী মান্নান মিয়া। বাদীর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ঘটনাস্থলে এক এসআইয়ের নেতৃত্বে এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ৮জনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী নিজে। তার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, একই এলাকার বাসিন্দা মান্নান মিয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাকে কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। মান্নানের এ কু প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় এবং এলাকার জনপ্রতিনিধি দিয়ে মান্নানকে সর্তক করা হলে মান্নান তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। তার ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। 

এর প্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির রাতে আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় পাইকারহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে বৈশাখবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির অনুমানিক ২শ গজ দূরে পশ্চিম-দক্ষিণে মান্নান মিয়া তাকে টানাহেঁচড়া করে পার্শ্ববতী আমজাদ হোসেনের আম বাগানের ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে।

এ সময় মান্নান তাকে হুমকি প্রদান করে বলেন এ ঘটনার বিষয়ে কাউকে জানালে ও মামলা মোকদ্দমা করলে মেরে ফেলবে। বাড়ি ফিরে প্রতিবন্ধী স্বামী আশরাফ আলীকে জানালে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। স্বামীর চেঁচামেমি শুনে মান্নানের লোকজন বাড়ির ভিতরে ঢুকে স্বামীসহ তাকে এলাপাথারী মারধর করে।

এরপর মান্নান অন্য আসামিদের সহযোগিতায় জোরপূর্বক তাদের বাড়ির বাইরে আঙ্গিনায় নিয়ে যায়। একটি আম গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে মারপিট করেন। তার মারপিটের ফলে আমার শরীরে কালো, ছিলা, ফুলা জখম করে দেয়। ৩শ টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার ও আমার স্বামীর স্বাক্ষর নেয়।

ধর্ষণের শিকার ওই নারী বলেন, ‘আমাদের ডাকচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে মান্নান গং তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদান করে।’

এ ঘটনায় ওই নারী নিজে বাদী হয়ে মান্নান মিয়াসহ ৮জনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি এজাহার প্রদান করেছে। এজাহারে উল্লেখ্য আসামিরা হলো দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রব্বানী মিয়া (২৮), রোস্তম আলী পুত্র আশরাফুল আলম (৩৫), মান্নান মিয়ার স্ত্রী সুলতানা বেগম (৪০), কন্যা মিনারা বেগম (২৫), শাপাদ খাতুন (২২), কামরুজ্জামানের স্ত্রী শিউলী বেগম ও আব্দুর রহিমের মেয়ে রেবেকা আক্তার (৫৫)। উভয়ে পাকপাড়া ইসলামপুরের বাসিন্দা।

এ ঘটনার সূত্র ধরে ঘটনাস্থলে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, দেড় মাস আগে মান্নান মিয়া উক্ত প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক আশরাফ আলীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিলো। স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুর ইসলাম বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। ১৩এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে মহিলাটিকে মান্নান মিয়া পূনরায় ধর্ষণ করে। রাত ১২টার দিকে তাদের পরিবারে সকলকে ধরে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে বেদম প্রহর করে। এবং ধর্ষিতার মুখমণ্ডলে শুকনা মরিচের গুঁড়া ঘষে দেয়।

প্রতিবেশিরা জানায়, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুর ইসলাম ও মান্নান গং ৩শত টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে ধর্ষিতা ও তার প্রতিবন্ধী স্বামীর স্বাক্ষর গ্রহণ করে। ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে রাতভর ধর্ষিতার গায়ে পানি ঢেলে দেয়। ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুর ইসলাম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পরদিন ১৪এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) বেলা ১২টায় ধর্ষিতাকে নিয়ে শ্যামপুর রেল স্টেশনে যান এবং ট্রেন যোগে তাকে বাবার বাড়ি কুড়িগ্রামে পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ টেকনাফে ইয়াবাসহ হানিফ পরিবহনের চালক আটক

ধর্ষণের ঘটনায় কোন মামলা হয়েছে কি না মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর আলী বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় ধর্ষিতা নিজেই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। যার মামলা নং ৪৩, তাং ২০.০৪.২০১৯ইং। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বাদীর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ঘটনাস্থলে এক দারোগার নেতৃত্বে এক প্লাটন পুলিশ মোতায়েন করেছি। তাদের অভিযুক্ত আসামিদের ও গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ইত্তেফাক/নূহু