রংপুরের গংগাচড়ায় জা-এর ঢেলে দেওয়া গরম পানিতে দগ্ধ সাবিনা বেগম (৩০) হাসপাতালে ৮ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
ঘটনাটি ঘটেছে ১১ জুন সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের পূর্ব মান্দ্রাইন গ্রামে। এ ঘটনায় মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের পূর্ব মান্দ্রাইন গ্রামে জমি সংক্রান্ত জের ধরে সাবিনা নামের এক গৃহবধূকে মুখ ও বুকে গরম পানি ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে ঝলসে দিয়েছে পাষণ্ড জা আমেনা বেগম ওরফে ময়না বুড়ি। গত ১১ জুন সকালে বাড়ি সংলগ্ন সাবিনা বেগমের স্বামী গোলাম রব্বানীর বসত ভিটায় লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির ৭/৮ টি গাছ দা দিয়ে কুপিয়ে ও ভেঙে ক্ষতি সাধন করছিলো ময়নাবুড়ি ও তার স্বামী তরিক মিয়া। এ সময় সাবিনা বেগম তাদের বাধা দিতে গেলে ময়না বুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
এক পর্যায়ে সাবিনা বেগমকে বাঁশ দিয়ে বুকে-পিঠে, হাতে-পায়ে ও মাথায় মারে করে। এ আঘাতে সাবিনা বেগম মাটিতে পড়ে যায়। সে সময় ময়না বুড়ি তার বাড়িতে গিয়ে চুলায় থাকা ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে মরিচের গুড়ো মিশিয়ে সাবিনা বেগমের মুখে ও বুকে ছুঁড়ে দেয়। এতে সাবিনার মুখ ও বুক দগ্ধ হয়ে ঝলসে যায়।
এ সময় ময়না বুড়ি ও তার স্বামী সাবিনা বেগমকে গলা চেপে হত্যারও চেষ্টা করে। সাবিনার চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। তখন ময়না বুড়ি ও তার স্বামী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর সাবিনাকে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের নিচতলার ৩৭ নং ওয়ার্ডের ৪নং বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
সাবিনার ভাই প্রতিবন্ধী সাইদ মিয়া বলেন, ঘটনার পর পুলিশ মামলা নিলেও আসামি গ্রেফতার বা আমার বোন সাবিনার কোন খোঁজ নেয়নি পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এক প্রতিবন্ধী। আমিই আমার পরিবারের বোঝা। তার ওপর আমার সুস্থ বোনকে আমেনা বেগম ওরফে ময়না বুড়ি ঝলসে দিয়েছে! তাকে এখন কে দেখবে? তার ছোট ২টি মেয়ে রিতু ও রিশা মনির কি হবে?’
সাবিনা বেগমের সন্তান রিতুমনি (১০) বলেন, আমার মাকে আমার চাচী ময়না বুড়ি আমার সামনে মরিচ মিশানো গরম পানি মুখে ঢেলে দেয়। তখন আমার মা যন্ত্রনায় চিৎকার করতে থাকে। আমার মায়ের যারা এ অবস্থা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’
রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার মারুফুল ইসলাম জানান, ‘সাবিনার শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে। তাকে সুস্থ করার আমরা যথাসাধ্য চেষ্ঠা করছি। তবে তার মুখের অবস্থা আগের মতো অবস্থায় ফেরানো যাবে না।’
তদন্তকারী অফিসার আবুবক্কর ফকরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করছি। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ চোরাকারবারী আটক
এ বিষয়ে গংগাচড়া থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ইত্তেফাক/নূহু