শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে শিশুসহ নিহত ২

আপডেট : ০৮ জুলাই ২০১৯, ২১:১৫

গত তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে কাপ্তাই কলাবাগান এলাকায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- সূর্য্য মল্লিক (৩) ও তাহমিনা (৩০)। খবর পেয়ে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। 

এদিকে, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজন জেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রে না গেলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে। গত রাত থেকে টানা বর্ষণের ফলে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আতঙ্ক। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বৃষ্টির পানির তোড়ে লংগদু-দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটি-বান্দরবান, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রাঙ্গামাটি শহরের পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন কর্মী ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। 

এদিকে, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আজ সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী একটি ঘরের ওপর বিকল শব্দে ভেঙে পড়ে। এ সময় দু’টি পরিবারের ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে হতাহাতের উদ্ধার করে।

আরো পড়ুন: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগ করলেন কাদের সিদ্দিকী

স্থানীয় তরুণ স্বেচ্ছাসেবী মো. আবু তৈয়ব জানন, রাঙ্গামাটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনোঘর, যুব উন্নয়ন এলাকা, শিমুলতলী, ভেদেভেদী, সনাতন পাড়া, লোকনাথ মন্দিরের পেছন সাইড, রূপনগর, আরশি নগর, টিভি সেন্টার, আউলিয়া নগরসহ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম। 

স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন কমিটি পৌর কাউন্সিলারদের তত্ত্বাবধানে এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। 
২০১৭ সালের দুর্যোগরে কথা মাথায় রেখে রাঙ্গামাটি শহরের ৬নং ওয়ার্ডকে বেশি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কোন আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আসেনি।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ব্যাপক ভাঙন। ছবি: ইত্তেফাক

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তর্পণ দেওয়ান জানান, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত খাবারও মওজুদ রাখা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাঙ্গামাটি পৌসভারসহ ১০ উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮টি পরিবারের প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিতে আছে। 

জেলা প্রশাসক জানান, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বিগত দুই মাস ধরেই জনগনকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ৩ দিনের বর্ষণে রাঙ্গামাটিতে স্বাভাবিক থাকলেও কাপ্তাই এলাকায় পাহাড় ধসে ২ জন মারা গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবারো মাঠে নেমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নিহত ২ জনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুন থেকে টানা বর্ষণের ফলে ১৩ জুন রাঙ্গামাটি জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্যসহ ১২০ জন নিহত হয়। পরের বছর ২০১৮ সালের ১১ জুন নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে মুত্যু হয় ১১ জনের।

ইত্তেফাক/এমআই