শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যৌতুক না পেয়ে মায়ের কাছ থেকে দুধের শিশু কেড়ে নিলো পাষণ্ড বাবা, মারা গেল শিশুটি

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ১৯:২৯

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে যৌতুকের দাবিতে নজিরবিহীন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। হামিদুল ইসলাম (২৭) নামের যৌতুকলোভী এক পাষণ্ড যৌতুকের টাকা না পেয়ে মায়ের কাছ থেকে ৫ মাস বয়সি শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় মায়ের বুকের দুধের অভাবে অভুক্ত থেকে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ওই শিশু।

এ ঘটনার পর মারা যাওয়ার খবরটিও দেওয়া হয়নি শিশুটির মাকে। এ মাসের ৬ তারিখে এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চাকতাবাড়ি গ্রামে।

ওই ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধূ শারমিন খাতুন প্রথমে রৌমারী থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় ওই নারী কুড়িগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় যৌতুকলোভী স্বামী হামিদুল ইসলামকে। মামলায় যৌতুক ছাড়াও দুধের বাচ্চাকে মেরে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার চাকতবাড়ি গ্রামের হারান আলীর পুত্র হামিদুল ইসলামের সঙ্গে রাজীবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের দিনমজুর মাহী রহমানের মেয়ে শারমিন খাতুনের বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধু শারমিন খাতুনের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। কারণে-অকারণে উঠতে-বসতে নির্যাতন চালানো হতো তার ওপর। এরই মাঝে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।

যৌতুকের কারণে স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমিন খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতো। আমার বাবা, মা গরীব মানুষ অত টাকা দিতে পারবে না-একথা বলা মাত্রই আমাকে মারপিট করতো। খেতে না দিয়ে সারারাত উপোস রাখতো আমাকে। বিয়ের দুই বছরের মধ্যে এক বছরই আমাকে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ৭ মাস আগে যৌতুকের টাকা আনতে মারপিট করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার বাবার বাড়িতে আমার ছেলে সন্তান জন্ম হয়। জন্মের পর একদিনও আমাকে ও তার সন্তানকে দেখতে আমাদের বাড়ি আসেনি। ও (স্বামী) খবর দেয় এক লাখ টাকা ছাড়া যেন আমি তাদের বাড়িতে না যাই।’

নির্যাতিতা গৃহবধূর বাবা মাহী রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘মাসের পর মাস যায় মেয়ের জামাই ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কোনো খোঁজখবর নেয় না। এ অবস্থায় আমি, আমার স্ত্রী দু’জনে আমাদের মেয়েকে নিয়ে বেয়াই বাড়ি যাই। যাওয়ার পর যখন তারা জানতে পারে যে যৌতুকের এক লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে যাইনি, তখন আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার মেয়ের কোল থেকে ৫মাস বয়সি নাবালক দুধের বাচ্চাকে কেড়ে নেয় জামাই হামিদুল ইসলাম। এরপর আমাদের সঙ্গে আমাদের মেয়েকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে জানতে পারি ২১দিনের মাথায় মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে শিশুটি মারা যায়। মৃত্যুর খবরটিও দেয়নি তারা।’

শারমিন খাতুনের মা হালিমা বেগম বলেন, ‘বিয়ের সময় নগদ ২৫ হাজার টাকা আর একটা গাভী গরু তুলে দিয়েছিলাম জামাইয়ের হাতে। কিছুদিন পর জামাইর ঘরের আসবাবপত্র বানিয়ে দিয়েছি। এখন আবার এক লাখ টাকা যৌতুক চায়। আমরা গরীব মানুষ। এত টাকা যোগার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারপরও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এক লাখের জায়গায় ২৫ হাজার টাকা দিবার চাইছিলাম। জামাই কিছুতেই তা রাজি হয় না। তার এক লাখ টাকাই চাই।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত স্বামী হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে দিয়ে সংসার হবে না বিধায় আমার বাচ্চাকে আমার কাছে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। আর যৌতুকের কথা বলছেন- এটা তো শ্বশুর বাড়ি থেকে সব জামাই পায়। আমি আমার শ্বশুরের কাছে মাত্র এক লাখ টাকা চেয়েছিলাম ব্যবসা করার জন্য কিন্তু তারা সেটা দিতে পারবে না। মানুষ জামাইগরে তো অনেক কিছুই দেয়। কিন্তু আমার শ্বশুর শ্বাশুরীর কাছে কিছু চাইলে দোষ হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন: রায়পুর-পানপাড়া সড়কে দুই বছর ধরে যান চলাচল বন্ধ

এ প্রসঙ্গে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু মোহাম্মদ হাসান ইনাম বলেন, ‘ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেনি। দুধের বাচ্চাকে মার কাছ থেকে জোর করে আলাদা করে রেখেছে-এমন খবরও আমাকে কেউ দেয়নি। খবর পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’

ইত্তেফাক/নূহু