শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চৌহালীর চরাঞ্চলে বাড়ছে বন্যার্তদের হতাশা

আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৯, ২০:৩৮

সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন জনপদ চৌহালী উপজেলা জুড়ে চলমান বন্যা দুর্ভোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। যতই দিন যাচ্ছে এ দুর্ভোগের মাত্রা ততই বাড়ছে। বর্তমানে উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

যমুনার ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত জনপদ চৌহালীর যমুনা নদীতে সামান্য পানি কমলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে উমরপুর, ঘোরজান, স্থল ও সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাড়ির নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি বেকার হয়ে যাওয় মানুষগুলোর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ঐসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে।

সরেজমিনে জেলার দক্ষিণের শেষ সীমানা মিনাদিয়া চরে গিয়ে দেখা যায়, চরপাচুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি ভাঙ্গন হতে মাত্র ১৫ গজ দুরে অবস্থায় করায় পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই স্কুলের পূর্ব পাশের একটি বিশাল ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সব গুলো ঘর ডুবে যাওয়ায় কোন রকমে মাচা করে চলছে সবার বসবাস।

এ ব্যাপারে মিনাদিয়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক ময়দান আলীর স্ত্রী অন্তরা খাতুন ও জয়েদ আলীর স্ত্রী ফুলমতি বানু জানান, 'আমরা আজ এক সপ্তাহ ধরে চরম কষ্টে দিন যাপন করছি। ঘর ডুবে যাবার পাশাপাশি নলকূপও তলিয়ে যাওয়ায় দুর থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। আমাদের পরিবারের কারো কাজ নেই, সবাই বেকার। স্কুলেও যেতে পারছেনা ছেলে মেয়েরা। এ অবস্থায় খাবার সংকটই আমাদের বড় সমস্যা। কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি আমরা। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের।'

এদিকে ঘোরজান ইউনিয়নের মুরাদপুরেও একই অবস্থা। যমুনায় ৪ বছর আগে বাড়ি-ঘর হারানো মানুষগুলো এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে পুরো গ্রামের কয়েকশ ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা সবই তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ওসমান গণি, জয়নাল আবেদিন ও রহিমা খাতুন সহ ৫টি পরিবারের ২৫ জন মানুষ উপায় না বুঝে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা জানান, এ দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় এক কিলোমিটার দুর হতে আনা হচ্ছে পানি। আর কলাগাছের ভুড়োয় চলছে বাথরুম। এতো কষ্ট করলেও আমাদের কেউ খবর নেয়নি। ৫ কেজি চালও আমাদের দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন:  সাতক্ষীরায় অষ্টম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবক আটক

চৌহালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনু মিয়া জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বানভাসী মানুষের জন্য ৬৩ টন চাল ও ৪শ' প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে ৪০টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ৪০টি মেডিকেল টিমও কাজ করছে। ৪৬টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে বানভাসী মানুষের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় আমরা বিতরণে হিমসিম খাচ্ছি।

এসব এলাকা পরিদর্শন করে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস মর্মাহত হয়ে জানান, সরেজমিনে চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন না করলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে পরিমাপ করা যাবেনা। তাই সাধ্যানুযায়ী সবার অসহায় এসব মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জেলা পরিষদ থেকে খুব তাড়াতাড়ি সাহায্যের হাত বাড়াবো।  

ইত্তেফাক/জেডএইচডি