গোপালগঞ্জে ক্লিনিকের ফটকের সামনে রাস্তার ওপর সন্তান প্রসব করলেন গৃহবধূ রোজিনা বেগম (৩২)। গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১২টায় শহরের ঘুল্লিবাড়ি মোড়ে মালঞ্চ ক্লিনিকের ফটকের সামনের রাস্তায় তিনি সন্তান প্রসব করেন।
এ সময় প্রসূতির আর্তচিৎকারে আশপাশের মহিলাসহ লোকজন ছুটে আসেন। তারা কাপড় দিয়ে প্রসূতি ও তার বাচ্চাকে আড়াল করেন। স্থানীয় নারীরা রাস্তার ওপর ওই প্রসূতির ডেলিভারি করেন। তারপর সে কাপড়ের আড়ালে সদ্যজাত শিশুর নারী কাটা থেকে শুরু করে প্রসূতিকে সব ধরণের কাজে সহায়তা করেন।
জানা গেছে, প্রায় ৩০ মিনিট ডাকাডাকি করে প্রসূতির মুমূর্ষু অবস্থার কথা বলে অনুনয় করা হলেও মালঞ্চ ক্লিনিকে কর্মরত নার্স ও কর্তৃপক্ষের মন গলানো সম্ভব হয়নি। তারা ক্লিনিকের গেট খোলেনি। বরং বারবার ক্লিনিকে কর্মরত নার্স ইতি রানী রোগীকে সেখান থেকে সরে যেতে বলে ধমক দেয় বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রসূতি রোজিনা বেগম গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের নিয়ামূল শেখের স্ত্রী। প্রসূতির শাশুড়ি বিনা বেগম (৬০) বলেন, 'সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গ্রামের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রোজিনা বেগমের প্রসব বেদনা ওঠে। তাকে প্রথমে শহরের নার্গিস ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক না থাকায় তাকে মালঞ্চ ক্লিনিকে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মালঞ্চ ক্লিনিকে পৌছানোর পর প্রসূতি প্রসব বেদনায় ছটফট করতে শুরু করেন। আমরা মালঞ্চ ক্লিনিকের গেট খুলতে অনুরোধ করি। পরে আমরা গেটে ধাক্কাধাক্কি করি। আমাদের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে আশপাশের লোজন ছুটে আসেন। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মন গলেনি। তারা গেট খোলেনি। চিকিৎসা দেয়নি। আমাদের সঙ্গে অমানবিক অচরণ করেছে। ক্লিনিকের নার্স ইতি রোগী সেখান থেকে সরে যেতে বলেছে। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছে। এতে আমরা খুবই অবাক হয়েছি।'
ঘুল্লিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা লিমন (২০) বলেন, 'ক্লিনিক গেটে চিৎকার, চেচামেচি শুনে আমি আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাদে যাই। সেখান থেকে দেখি প্রসূতিকে নিয়ে স্বজনরা বিপাকে পড়েছে। পরে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। আমার দেখাদেখি আরো অনেকে এগিয়ে আসেন।'
ঘুল্লিবাড়ি এলাকার গৃহবধূ তুরানী সুলতানা (৩৫) বলেন, 'প্রসূতির আর্তচিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি ক্লিনিক গেটের সামনের রাস্তায় গৃহবধূ বাচ্চা প্রসব করেছে। পরে কাপড় দিয়ে সদ্যজাত শিশু ও মাকে আড়াল করি। তারপর শিশুর নারী কেটে দেই। এ ছাড়া প্রসূতিকে আমরা সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করি। প্রসূতি ও তার স্বজনদের চিৎকারে আমরা উঠে এসেছি। কিন্তু ক্লিনিকের মালিক ডা. অনুপ কুমার মজুমদার তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তার নার্সসহ ক্লিনিকে কর্মরতরা এগিয়ে আসেনি। এ দায় তারা এড়াতে পারে না।'
ঘুল্লিবাড়ি এলাকার অপর গৃহবধূ তহমিনা (২৫) এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বাচ্চা প্রসব করার পর রোগী ও তার স্বজনরা ক্লিনিকের সামনের রাস্তার ওপর প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। এ সময়েও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকের গেট না খুলে রোগীর সঙ্গে অমানবিক অচরণ করেছে। পরে প্রসূতি ও তার বাচ্চাকে শহরের বটতলার হামিদা ক্লিনিকে ভর্তি করি।'
ক্লিনিকের অভিযুক্ত নার্স ইতি রানী বুধবার দুপুরে ডিউটিতে ছিলেন না। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ক্লিনিকের ম্যানেজার স্বীকার করেছেন ঘটনার সময় নার্স ইতি রানী ডিউটিতে ছিলেন।
ক্লিনিকের মালিক ডা. অনুপ কুমার মজুমদার বলেন, 'ঘটনার সময় আমি ঘুমে ছিলাম। এ বিষয়টি আমি জানতে পারিনি। পরে জেনেছি প্রসূতি এক মহিলা শেষ মুহূর্তের প্রসব বেদনা নিয়ে আমার ক্লিনিকের সামনে এসেছিলেন। তার স্বজনরা আমাদের ডাকাডাকি করেছিলো। কিন্তু আমরা তাতে সাড়া দিতে পারিনি। এক পর্যায়ে ওই মহিলা রাস্তায় বাচ্চা প্রসব করেন এবং পরে চলে যান। আমি এটুকুই জানি।'
আরও পড়ুন: গৌরনদীতে ডেঙ্গুতে গৃহবধূর মৃত্যু, পেপে পাতার রস খেয়ে ৭ জন সুস্থ
হামিদা ক্লিনিকের মালিক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, 'রাস্তায় বাচ্চা প্রসবের পর প্রসূতি ও সদ্যজাত শিশু গভীর রাতে আমার ক্লিনিকে আসেন। তাদের আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করি। ভর্তির সময় মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ ছিলো। তাই তারা মঙ্গলবার সকালেই হামিদা ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফিরে যায়।'
ইত্তেফাক/নূহু