বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মিন্নি, ঘুমের মধ্যেও চিৎকার দিয়ে ওঠেন

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৪৬

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া জামিনে মুক্ত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বর্তমানে বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে তার। প্রায় রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু মামলার পরবর্তী তারিখ কাছে থাকায় তাকে ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন মিন্নি। স্মৃতিকাতর ও বিষণ্নতা নিয়ে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকায় বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় রয়েছেন তিনি। একপ্রকার মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে সেখানে জীবনযাপন করছেন তিনি।

বুধবার মিন্নির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে মিন্নি ছিলো সদা হাস্যোজ্জ্বল, চঞ্চল ও স্বজনদের সঙ্গে সদালাপী। অনেক স্বজনের মাঝেও এখন সেই মিন্নি ভুগছেন একাকিত্বে। শারীরিকভাবে অসুস্থ মিন্নি এখন স্বামী রিফাত শরীফের স্মৃতিতে কাতর। একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে একাকি ঘরে দিন কাটে তার। তবে মিন্নির এমন জীবনযাপনে চিন্তিত স্বজনরা। উদ্বিগ্ন তার বাবা-মা।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, 'দুই হাঁটুতে কালো দাগ রয়েছে মিন্নির। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটতে পারে না সে। চঞ্চল ও সদালাপী মিন্নি এখন কারও সঙ্গে কথা বলে না। খেতে চায় না কিছুই। নিজের ঘরে সবসময় চুপচাপ থাকে। কখনও একাকী কাঁদে। যে ঘরে মিন্নি থাকে সেই ঘরে রিফাতের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। এসব স্মৃতি মিন্নিকে আপ্লুত করে তুলছে। ঘুমের মধ্যেও চিৎকার করে কেঁদে ওঠে মিন্নি।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরও বলেন, 'মিন্নি অনেক অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমরা আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছি। কয়েকদিন পর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। ওই তারিখে মিন্নিকে আদালতে হাজির হতে হবে। ওই তারিখের পরে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। আপাতত চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে।'

চাচা আবু সালেহ বলেন, 'মিন্নির জামিনে কারামুক্ত থাকার ব্যাপারে আদালতের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেসব নির্দেশনা মেনে অতি দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ও চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কাজ থেকে উৎসুক মানুষকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।'

মিন্নির অসুস্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, 'এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে কথা বলেছি। মিন্নির চিকিৎসার জন্য তার বাবাকে পারামর্শ দিয়েছি। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। তার আগেই মিন্নিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোনো জায়গায় নেওয়া যাবে। তবে ধার্য তারিখে মিন্নিকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।'

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহবার উদ্দীন বলেন, 'মিন্নির মানসিকভাবে ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক। তার স্বল্প বয়সের জীবনে যা ঘটেছে, গণমাধ্যমে তা দেখে আমরাই ঘাবড়ে গেছি। তার সুন্দর জীবন লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে একটি ঘটনা। সেসব দৃশ্য যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন তার স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। এসব কারণে মূলত মিন্নি উদাসীন, বিষণ্ন ও স্মৃতিকাতর।'

ডা. মো. সোহবার উদ্দীন আরও বলেন, 'সময় নষ্ট না করে মিন্নিকে কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো দরকার। এতে মিন্নি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। পাশাপাশি মিন্নির শারীরিক অন্য কোনো অসুস্থতা থাকলে তারও চিকিৎসা করানো দরকার।'

প্রসঙ্গত, বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। যে দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেওয়া হয়েছে তা হলো, মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না এবং তাকে তার বাবার জিম্মায় থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর পালানোর পরই গাজায় ইজরায়েলের হামলা

২৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে তার জামিন বাতিল হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করেন আদালত।

ইত্তেফাক/নূহু