শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাকুন্দিয়ায় ২৫ বছর ধরে শিকলবন্দি রতন মিয়া

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:০৯

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ২৫ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে রতন মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে।

জানা গেছে, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রতন মিয়া তৃতীয়।  তিনি অবিবাহিত। কোনো পড়াশোনা করেননি। বাড়িতেই কৃষিকাজ করতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ কারণে বছর তিনেক পর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এর কিছুদিন পর থেকেই তাকে শেকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে রতন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পূর্বপাশের বসতঘরের বারান্দার একটি ছোট অন্ধকার ঘরের মাঝখানে একটি পাকা পিলার। পিলারের সাথে রতন মিয়ার ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। মেঝেতে একটি বিছানায় তিনি মাথা নিচু করে বসে আছেন। দীর্ঘদিন তিনি এভাবে রয়েছেন। মাঝে মাঝে আপন মনে কথা বলেন। এখানে তার খাওয়া-দাওয়া এবং প্রস্রাব-পায়খানা চলে।

আরও পড়ুন: ভাণ্ডারিয়ায় অটোরিকশার ধাক্কায় স্কুলছাত্র নিহত

রতন মিয়ার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া বলেন, রতন মিয়া আর দশজন বালকের মতোই সুস্থ ও সবল ছিল। সংসারের কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মেই করে যেত। কিন্তু প্রায় ৩০ বছর আগে তাদের জমিতে পাশের বাড়ির হযরত আলীর একটি গরু ধান গাছ খাচ্ছিল। খবর পেয়ে রতন মিয়া ওই গরুটিকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসছিল। এসময় হযরত আলী দৌড়ে এসে রতন মিয়ার হাত থেকে গরুটি নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এতে দুজনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক ও ধস্তাধস্তি হয়।এক পর্যায়ে হযরত আলী গরু বাঁধার একটি খুঁটি দিয়ে রতন মিয়ার মাথার একপাশে সজোরে আঘাত করে। এতে রতন মিয়ার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুদিন পর রতন মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে কয়েক দফা চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন রতন মিয়া কোনদিনই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। পরে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

আঙ্গুর মিয়া আরও বলেন, বাড়িতে আনার পর তার অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। বাড়ির বাইরে গেলেই লোকজনের ওপর চড়াও হয় এবং মারতে শুরু করে। তাই তাকে বাধ্য হয়ে বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে তার সেবাযত্নে কমতি নেই। হযরত আলীর বিষয়ে জানতে চাইলে আঙ্গুর মিয়া বলেন, বিষয়টি তখন গ্রামীণ দরবার শালিসের মাধ্যমে মিমাংসা হয়ে যায়।

তবে ঢাকার কোন হাসপাতাল এবং কোন চিকিৎসকের অধীনে রতন মিয়ার চিকিৎসা করানো হয় সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি আঙ্গুর মিয়া।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.রুহুল আমীন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে রতন মিয়ার যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না থাকে তাহলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা করে দিতে পারব।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান বলেন, ঘটনাটি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

ইত্তেফাক/এমআরএম