শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘অহন মাইয়ারা পোলাগো ছবি ও বায়োডাটা আগে দ্যাহে’

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৮

আদি যুগ থেকে আমরা ঘটকালি পেশার সঙ্গে পরিাচত। মঙ্গলবার সকালে বরিশানের গৌরনদী পৌর সভার শেষ মাথা দিয়াসুরে বসে কথা হয় বরিশালের প্রবীন ৪ ঘটকের সঙ্গে। তারা সবাই একই সুরে বলেন, ঘটকদের দিন শেষ। মোবাইলে সব শেষ কইরা দিছে। অহন আর ঘটক লাগেনা। ছেলে-মেয়েরা মোবাইলের মাধ্যমে সম্পর্ক করে অহরহ বিয়ে করছে।

‘যৌতুক লইলে মোরে লাখে ১০ হাজার টাকা দিতে হইবে। টাহা ছাড়া মুই কোন বিয়ার কামে হাত দেইনা।’ একথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদীর পিংগলাকাঠি গ্রামের ঘটক আব্দুর রব খলিফা (৮২)। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত ঘটকালি পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। ঘটকালি করে তিনি দিয়েছেন প্রায় হাজার খানেক বিয়ে। নিজেকে এলাকার শ্রেষ্ঠ ঘটক বলেও দাবি করেন রব ঘটক।

এরপর কথা হয় আগৈলঝাড়ার বেলুহার গ্রামের ঘটক সোবাহান সরদারের (৬৩) সঙ্গে। ২৩ বছরে প্রায় ৪ শতাধিক বিয়ের ঘটকালি করেছেন তিনি। সোবাহানের কাছে থাকা ছবির অ্যালবাম খুলে দেখা যায়- মেয়েদের ছবির চাইতে ছেলেদের ছবি বেশি। তার অ্যালবামে আরো রয়েছে বিবাহযোগ্য অসংখ্য ছেলে-মেয়েদের বায়োডাটা। বায়োডাটার কথা কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘যুগ পাইলটা গেছে, অহন মাইয়ারা পোলাগো ছবি ও বায়োডাটা আগে দ্যাহে। ছেলে পছন্দ না হইলে মাইয়ারা বিয়ায় রাজি হয়না। বাল্যবিবাহ, যৌতুক দেওয়া-নেওয়া অপরাধ বিধায় ওইসব বিয়ের ধারে কাছেও যাই না।’

আরো পড়ুন: অশ্লীল ভিডিও নিয়ে যা বললেন মেহজাবিন

শুধুমাত্র ছওয়াবের আশায় দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত ঘটকালি করছেন উজিরপুর উপজেলার মিরেরহাট গ্রামের ঘটক আলম ভান্ডারী (৬৫)। তিনি জানান, ‘টাহা পয়সার জন্য ঘটকালী করিনা। ঘটকালী করি ছওয়াবের আশায়। তবে বিয়ে হওয়ার পর বর ও কনে পক্ষ খুশি হয়ে হাদিয়া স্বরূপ কিছু দিলে তা তিনি গ্রহণ করি।’

পিংগলাকাঠি গ্রামের গগন (৭০) ঘটক এখন আর ঘটকালি করতে চান না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, ‘কষ্ট কইর‌্যা ছেলে-মেয়ের সম্বন্ধ ঠিক করি। এরপর দুপক্ষ মোরে না জিগাইয়া বিয়া পড়াইয়া অনুষ্ঠান করে। ঘটকের কথা কেউ মনে করেনা। বহু পোলা-মাইয়ারা অহন নিজেরাই বিয়া করে। ঘটক লাগেনা।’

ইত্তেফাক/বিএএফ