বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নারায়ণগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম বাড়ছে

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৯

নারায়ণগঞ্জ শহরের কিশোর গ্যাংয়ের দৌড়াত্ম বেড়েই চলেছে। তবে এসব কিশোর গ্যাং তৈরি হওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা। ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি তল্লাশী করার ব্যাপারে এলাকার মুরুব্বিরা কথা বলছেন। তবে কিশোর গ্যাংয়ের তত্ত্বাবধানকারীরা শক্তিশালী হওয়ায় কার্যক্রম এগুচ্ছে না।

প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন থাকায় কিশোর গ্যাংরা শহরময় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আর এদের মূল আস্তানা হল দেওভোগ এলাকায়। এখানে এরা ফ্রি স্টাইল চলাফেরা থেকে শুরু করে স্কুলগামী মেয়েদের উত্তেক্ত করা, অলিতে গলিতে আড্ডা দেওয়া আর নেশাজাতীয় দ্রব্য পান থেকে শুরু করে বিক্রয় পর্যন্ত করে চলছে।

সদর ও ফতুল্লার সীমানা এলাকা হওয়ায় এই এলাকার সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পায় না। দায়িত্বশীল অনেকের অবস্থান এই এলাকায় হলেও এইসব কিশোর গ্যাংদের অসদাচারণের কারণে কেউ সচরাচর মুখ খোলেন না। এমন কি পুলিশেও জানানো হয় না।

এলাকাটি নাসিক মেয়রের বাসভবন হওয়া সত্ত্বেও অন্য এলাকার চাইতে এই এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেশি বলে দেওভোগবাসীর অভিযোগ। 

স্থানীয়রা জানান, দেওভোগের চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকাটি সদর ও ফতুল্লা মডেল থানা এলাকার মাঝামাঝি। কোন অপরাধী ধরা পড়লেও দুই থানার কে ব্যবস্থা নেবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা।

সম্প্রতি শহরের দেওভোগ এলাকায় উঠতি বয়সি ছেলেদের নষ্ট করতে কয়েকটি বাড়িতে অসামাজিক কার্যক্রম চালুর অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি বাড়িকে ঘিরেই আশেপাশের এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাদক ব্যবসা এবং কিশোর গ্যাংদের রাজত্ব। কিশোরদের মাদকব্যবসায় যুক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা অভিনব উপায় বের করেছে।

দেওভোগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেওভোগ এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার কয়েকটি বাড়িতে মাদকব্যবসাসহ অসামাজিক কার্যকলাপের জমজমাট আসর বসে। রুমার জামাই নামে এক ব্যক্তি স্বামী ও স্ত্রী মিলে নিজেদের বাড়িতেই মাদকের আস্তানা গড়ে তুলেছে। সুমন খন্দকার মাদক বিক্রি করতে গিয়ে এরআগেও বেশ কয়েকবার ধরা খেয়েছে। তার অবর্তমানে মাদকের ব্যবসা চালায় তার স্ত্রী রুমা।

স্থানীয়রা জানিয়েছে. প্রতিদিন এইবাড়িসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি বাড়িতে মাদকের হাট বসে। অপরিচিত লোকের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। হিজড়াদের মাধ্যমেও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে কিশোর গ্যাং গড়ে তুলে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমেও নানা সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে প্রশাসনের ব্যাবস্থা না থাকায় প্রায়শই এমন কয়েকটি বাড়িতে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর ওই এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ তরুণকে আটক করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। ওইদিন রাতে নগরীর দেওভোগ চেয়ারম্যান বাড়ি বাইতুল জামে মসজিদেও পেছনের মাঠ থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটকৃতরা হলো, দেওভোগের বাচ্চুর ছেলে শিপন (১৬), শাহজাহানের ছেলে সুমন (১৭), আহসান মিয়ার ছেলে আসিফ হাসান (১৭)। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১০টার দিকে বাইতুল জামে মসজিদের পেছনে বালুর মাঠে ঘোরাঘুরি করতে থাকে আটক ওই ৩ তরুণ। এ সময় তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী তাদের আটক করে। সদর মডেল থানার পুলিশ ওই ৩ তরণকে আটকের পর ফতুল্লা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

এছাড়া চলতি মাসের ৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম দেওভোগ আদর্শনগর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব চালিয়ে মধ্যরাতে শাকিল নামে এক সিমেন্ট ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া ওই এলাকায় লুটপাট ও অস্ত্রের মহড়া দেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। আহত শাকিল ওই এলাকার আব্দুল হালিম শেখের ছেলে। এ ঘটনায় আহত সিমেন্ট ব্যবসায়ী শাকিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

আরও পড়ুন: র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চাপাতি তুহিন নিহত

এলাকাবাসীর দাবি, অতিদ্রুত যাতে দেওভোগ এলাকায় পুলিশের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে অভিযোগ ওঠা বাড়িগুলোতে যাতে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

ইত্তেফাক/নূহু