বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বছর না ঘুরতেই মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ ভবনে ফাটল

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০০

নির্মাণের এক বছর না যেতেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত পাঁচটি ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। অধিকাংশ ভবনের ভেঙে গেছে দরোজা। এমনকি বেঁকে গেছে জানালাও। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই ভবনে বাস করা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার।

ভবন নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, লাল-সবুজ রঙে রাঙানো দেওয়াল। দেয়ালজুড়ে যেন বাংলাদেশের পতাকারই প্রতিচ্ছবি। বাড়ির সামনে পাথরের নামফলকে লেখা ‘বীর নিবাস’। ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধারা এই বাড়ি পেয়েই খুশি ছিলেন। কিন্তু বছর না যেতেই ভবনের নানা স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় অল্প দিনেই সরকারের দেওয়া উপহার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

ভবনের অনেক স্থনে পলেস্তারা খসে পড়েছে। নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করায় জানালা খুলে পড়ছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষা না করা, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নতুন মাটি ফেলে ভিত উঁচু করে তার ওপর ভবন করা, ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইন ও চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় এক বছরের আগেই ভবনগুলোতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

উপজেলার কেরোয়া ইউপির মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী একটি পাকা ভবন পেয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার বাড়িতে এই নির্মাণ কাজের সময় ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের তিনি নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে বারবার বলেছিলেন। কিন্তু তারা এই ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। এক বছর পার হওয়ার আগেই তার ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। নিম্নমানের কাঠ দেওয়ায় দরজা-জানালা বাঁকা হয়ে গেছে, যা লাগানো সম্ভব হয় না। নষ্ট হয়ে গেছে নলকূপটিও।

বামনী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালমের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, 'নির্মাণের সময় আমি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারে নিষেধ করি এবং এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাই। তখন তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন ঘরের দরজাগুলো ভেঙে গেছে, আটকানো যায় না। এমনভাবে ফাটল ধরেছে ঘরের মধ্যে থাকতে ভয় পাচ্ছি।'

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এলজিইডির পক্ষ থেকে রায়পুরে পাঁচটি ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রতিটি ভবনের জন্য ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৮ টাকার মূল্য নির্ধারিত হয়। ঠিকাদাররা দরপত্র পেতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিয়ে নির্মাণ করায় খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৪ কক্ষের একটি একতলা ভবন, পাশে একটি টয়লেট, গবাদি পশু ও হাস-মুরগি রাখার দুটি ঘর এবং একটি নলকূপ রয়েছে। ৫টি ভবন নির্মাণের মধ্যে ৪টি ভবন নির্মাণের দরপত্র পায় জেলার মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ ও অন্যটি পায় জেলার মেসার্স রিয়া অ্যান্ড ব্রাদার্স। ২০১৮ সালের মধ্যে রায়পুর উপজেলার সব কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্মাণের এক বছর না ঘুরতেই উপজেলায় নির্মিত পাঁচটি বীর নিবাসেই কম-বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রায়পুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজাম পাঠান বলেন, 'সরকারের দেওয়া এই ‘বীর নিবাস’ পেয়ে মহাখুশি ছিলেন ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। কিন্তু যাদের জীবনের বিনিময়ে এই দেশ, সেখানে তারাও রেহাই পান না দুর্নীতির কালো থাবা থেকে। এসব বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকবার উপজেলা এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাননি।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন ভূইয়া বলেন, 'ভবন হস্তান্তরের সময় শতভাগ কাজ বুঝে নিয়েই মুক্তিযোদ্ধারের দেওয়া হয়েছে। তারপরও এক বছরের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার মেরামত করে দেবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ করা খুবই স্পর্শকাতর। ক্ষতির তুলনায় তাদের অভিযোগ বেশি।'

আরও পড়ুন: শৈলকুপায় সীমানা পিলারসহ ২ জন গ্রেফতার

রায়পুরের ইউএনও সাবরীন চৌধুরী বলেন, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ভবন ফাটলের অভিযোগ পেলে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এলজিইডির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।'

ইত্তেফাক/নূহু