বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

'দেশের একমাত্র অদৃশ্য ব্রিজ!'

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:১৪

নওগাঁর রাণীনগরে সর্বরামপুর গ্রামে তিন বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে ব্রিজের নির্মাণ কাজ। এই ব্রিজটি নির্মাণ না হওয়ার কারণে কয়েক গ্রামের মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এলাকার জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে খালের দুই পাড়ে শুধুমাত্র দুটি খাম্বা তৈরি হয়। এরপর রহস্যজনক কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এই ফুট ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ওই এলাকার দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামে বসবাসরত স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এখানে শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও নৌকাই একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর।

রতনডারি খালের দুই পাশে অবস্থিত কাশিমপুর ও গোনা ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু রতনডারি খালের সর্বরামপুর ও ভবানীপুর চৌতাপাড়া নামক স্থানে স্থানীয়রা বছরের পর বছর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করে আসছে। এই সাঁকো দিয়ে সর্বরামপুর, কাশিমপুর, ডাঙ্গাপাড়া, এনায়েতপুর, ভবানীপুর, দূর্গাপুর, গ্রামসহ দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের জনসাধারণ চলাচল করে। 

সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের রাজস্ব উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ১৯লাখ টাকা ব্যায় ধরে কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বরামপুর-ভবানীপুর গ্রাম সংলগ্ন রতনডারি খালের ওপর ফুট ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। কাজটির ঠিকাদারি দায়িত্ব পান নওগাঁ সদরের গোলাম কিবরিয়া। দরপত্র অনুসারে শুষ্ক মৌসুমে ওই খালের দুই পাড়ে দুটি খাম্বা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরে রহস্যজনক কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিন বছর অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি নির্মাণের কাজ আর চোখে পড়েনি।

স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া এক যুবক শাহীন (১৯) বলেন, 'ব্রিজটির নির্মাণকাজ গত ৩ বছর ধরে পড়ে আছে। অনেক আশা করে ছিলাম আমরা যে ব্রিজটি হলে আমরা সহজে যাতায়াত করতে পারবো। এখন ব্রিজটি দেখলে মনের মধ্যে না পাওয়ার কষ্ট জাগে। মনের সে কষ্ট লাঘব করতে এভাবে নিজেকে বুঝাই যে, ওখানে একটি ব্রিজ আছে। আমরাই কেবল দেখতে পারছি না! মনে হয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য একটি অদৃশ্য ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছেন। আমাদের গর্ব করা উচিত যে, এটি দেশের একটি এবং সম্ভাব্য একমাত্র অদৃশ্য ব্রিজ!' ব্রিজটি কবে তৈরি হবে কিংবা আদৌ তা হবে কি না তা নিয়ে কোনও আশাও তারা করছেন না বলে জানান।

গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান বলেন, 'ব্রিজটি এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারে। কিন্তু সেই দীর্ঘদিনের দেখা স্বপ্ন পূরণ হতে চেয়েও পূরণ হলো না। কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগের সমাপ্তি করার লক্ষ্যে আমি বারবার সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন ফল পাইনি বরং ব্রিজের আংশিক অবকাঠামোও নষ্ট হচ্ছে। তাই অতিদ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ করা প্রয়োজন।'

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় উল্টোপথের বাসের চাপায় বৃদ্ধের মৃত্যু

উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাইদুর ইসলাম মিঞা বলেন, 'ব্রিজ নির্মাণের জন্য এখনও প্রায় ২৫লাখ টাকার প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদের তহবিলে এই পরিমাণ টাকা না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তাই যে কোন তহবিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দ পেলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।'

ইত্তেফাক/নূহু