শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান রাবি কর্তৃপক্ষের

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২০:২০

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বৃহস্পতিবার দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, লালকার্ড প্রদর্শন এবং শিক্ষকরা পৃথক মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ প্রয়াত আবরার ফাহাদের স্মরণে ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালি ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে আবরার হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে বিরাজমান শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করাসহ যে কোনো ধরণের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। এ মর্মে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে এ রকম কর্মসূচির নামে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তার দায়ভার কথিত আন্দোলনকারীদের ওপরই বর্তাবে।’ 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আবরার হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বাম ঘরানার শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে। পরে বেলা ১২টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করে। 

এছাড়া বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও বর্তমান প্রশাসনের দুর্নীতি, অনিয়ম তদন্তের দাবিতে সমাবেশ করে রাবির সাবেক প্রশাসনের অনুসারী ‘আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থক’ শিক্ষকদের ক্ষুদ্র একটি অংশের নেতৃত্বে গঠিত ‘দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজ’। 

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় একই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুর্নীতিবাজ অ্যাখ্যায়িত করে অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

শিক্ষক ফোরামের সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ’আজ মানুষের মত প্রকাশের অধিকার নেই। যদি থাকতো আবরার হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটতো না।'

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর ড. প্রভাষ কুমার কর্মকতার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ৯ অক্টোবর বুধবার সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথিত আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে আয়োজিত কর্মসূচিতে ৩০-৩৫ জন বহিরাগতের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর ফলে অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টোরিয়াল বডির তৎপরতায় ধরা পড়ে। এটি একটি নজীরবিহিন ঘটনা। জিজ্ঞাসাবাদকালে এসব বহিরাগত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে তাদের প্রলুব্ধ করতে নির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এস এম এক্রাম উল্যাহর নাম প্রক্টরের কাছে প্রকাশ করে। 

এ ধরনের কর্মসূচির নামে যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অশুভ তৎপরতা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে বিরাজমান শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করার যে কোনো ধরণের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে এ রকম কর্মসূচির নামে কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তার দায়ভার কথিত আন্দোলনকারীদের উপরই বর্তাবে।’ 

আরও পড়ুন: গোদাগাড়ীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্লাস-পরীক্ষা ও গবেষণাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম যথারীতি চলছে। আর এক সপ্তাহ পর প্রথমবর্ষ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি পূর্ব নির্ধারিত রয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের তারিখ ধার্য রয়েছে। ফলে দেশে-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি মর্যাদাপূর্ণ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্নকারী কোন কর্মকাণ্ড কাম্য নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানিয়েছে। 

ইত্তেফাক/এএন