বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রামেক মর্গে মোমবাতি জ্বালিয়ে ময়নাতদন্ত!

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:২২

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) মর্গের লাশকাটা ঘরে আছে ১৩টি টিউব লাইট। নয়টি এনার্জি বাল্বও আছে কিন্তু একটাও জ্বলে না। ময়নাতদন্তের সময় যারা লাশ কাটেন তারা তিন গজের মতো বৈদ্যুতিক তার দিয়ে একটা লাইট জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছেন। বিদ্যুত্ চলে গেলেই সে লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তখন মোমবাতি জ্বালিয়েই লাশের ময়নাতদন্ত করতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার রামেক মর্গে অ্যালকোহল পানে মৃত নওগাঁর বদলগাছির ভাণ্ডারপুরের ছইমুদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও বগুড়ার আদমদীঘির মাতাপুরের অখিল চাকির ছেলে অলিক চাকির (৪০) লাশের ময়নাতদন্ত হচ্ছিল। দুটি লাশের জন্য জ্বলছিল একটি মাত্র এনার্জি বাল্ব। অথচ ঐ ঘরে ১৩টি টিউবলাইট এবং আরো নয়টি সাধারণ লাইট রয়েছে। ফ্যান রয়েছে ১৬টি। তিনটি বোর্ডের সবগুলো সুইচ অন করলেও একটি লাইটও জ্বলেনি। তবে ফ্যান চলছিল তিনটি। যে এনার্জি বাল্বটি জ্বলছিল সেটির সুইচ বোর্ডের সঙ্গে নেই। তিন গজের মতো বৈদ্যুতিক তার ও সকেট দিয়ে জ্বালানো হয়েছে। ডোম রনি জানায়, তারাই লাইটটির ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যুত্ না থাকলে জ্বালাতে হয় মোমবাতি। প্রচণ্ড গরমের ভেতর তাদের লাশ কাটা এবং সেলাইয়ের কাজ করতে হয়।

ঐ ঘরে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের বসার জন্য কয়েক সারি বেঞ্চ রয়েছে। ময়নাতদন্তের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। ঐ শিক্ষার্থীরা বলেন, ফ্যান চলে না বলে গরমের সময় তারা বসতে পারেন না। ডোমেরা বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়। বিকাল ৪টার পর লাশ আসলে পরের দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। ৮টি লাশ রাখার মতো ফ্রিজ রয়েছে। তবে ৭/৮ বছর ধরে নষ্ট। এছাড়া ঘরে নেই পানির ব্যবস্থা। লাশ কাটার পর রক্ত পরিষ্কারে অন্য স্থান থেকে পানি আনতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও সমাধান হয়নি।

আরো পড়ুন: ২০২০ সালের মধ্যে ২৩ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এআই

ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক ডা. মারুফুল আরেফিন বলেন, একটা আদর্শ মর্গের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে। ফলে রামেক মর্গ আধুনিক মর্গের সংজ্ঞায় পড়ে না। লাইট জ্বলে না, ফ্যানও চলে না। শিক্ষার্থীদের মানবদেহের সবকিছু দেখানো যায় না। বিদ্যুত্ চলে গেলে মোমবাতি জ্বালাতে হয়। এমন পরিবেশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভুল আসাটা অস্বাভাবিক নয়। রামেক ফরেনসিক বিভাগের সদ্য সাবেক প্রধান ড. এনামুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এমন অনেক ঘটনা আছে, ময়নাতদন্তের সময় বিদ্যুত্ ছিল না। তখন মোমবাতি বা টর্চ লাইটের আলোতে লাশ কাটা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, পুলিশের তদন্তে দেখা যাচ্ছে খুন, অথচ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আত্মহত্যা। এমন অনেক ঘটনা আছে। আরএমপিতে থাকার সময় এমন একটি ঘটনা তারা আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। পরে আদালত দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে সত্যিই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন আসে। দ্রুত বিচার নিশ্চিতে এমন ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যেসব কারণে আসে, তার অবসান করতে হবে।

রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন কিছু দিন আগে। তখন মর্গে অনেক সমস্যা ছিল। কিছু কাটিয়ে উঠেছেন, কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। মর্গের আধুনিকায়নে অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

ইত্তেফাক/বিএএফ