মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মেয়াদোত্তীর্ণের ১৮ বছর পরও বুক চিতিয়ে তিস্তা রেলসেতু

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:১৫

রংপুরের তিস্তা সেতুর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৮ বছর পূর্ণ হবে আগামী ১৬ অক্টোবর। লালমনিরহাট রেল ডিভিশনের ১৮টি ট্রেন এই সেতু পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক মেইল, লোকাল ও একটি আন্তঃনগর ট্রেন। সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও একটি ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। মেয়াদোত্তীর্ণ এই সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণে সরকারি পরিকল্পনা থাকলেও নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অবশ্য বলছে, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে ১৯০১ সালে তিস্তা নদীর ওপর ২ হাজার ১১০ ফুট লম্বা এই তিস্তা রেলসেতু নির্মাণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সে সময় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু হিসেবে এটির ব্যাপক পরিচিতি ছিল। সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকা এবং দক্ষিণ পাশ যুক্ত হয়েছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সঙ্গে। ১১৯ বছর বয়সের এ সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল একশ বছর। ১৮ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও  রেল কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে দৈনিক পারাপার করছেন ১৮টি ট্রেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেতুটিতে মিত্রবাহিনী বোমবিং করায় কাউনিয়া প্রান্তের একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে মেরামতের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। সে থেকেই সেতু ওপর দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। মাত্রাতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাকও পাথরের ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

২০০১ সালে রেলসেতুর পূর্ব পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন। আর সড়ক সেতু চালু হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা বেশ নাজুক। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটির উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রেলের সাধারণযাত্রী ও অভিজ্ঞ মহল।

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা স্বপন, ভরত, সামাদ মিয়া, তোজাম আলী, রহিম মিয়া বলেন, তিস্তা রেল সেতুটির ওপর ট্রেন উঠলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো নামমাত্র মেরামতের কাজ হলেও সেতুটির কোনো উন্নতি ঘটেনি। 

আরও পড়ুন: আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ জঙ্গিসহ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ১৩ নারী গ্রেফতার

কয়েক মাস আগে তিস্তা রেলসেতু পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে তিস্তা রেলসেতুতে ট্রেনের গতি ও সংখ্যা বাড়ানো হবে। তাই তিস্তা নদীর ওপর আরেকটি রেলসেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরাতন সেতুর পশ্চিম পাশেই আরেকটি ডুয়েল গেজ সেতু নির্মাণে খুব দ্রুত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। 

রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী  ইঞ্জিনিয়ার আল-ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, তিস্তা সেতু মেরামত করা হয়েছে। এখন সেতুতে ট্রেন চলাচলের সহনশীল। আমরা একে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু বলতে পারিনা। যাত্রীদের আতঙ্কের ব্যাপারটি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করবো।
 
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ম্যানেজার মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, তিস্তা রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও এর পশ্চিম পাশে নতুন করে আরও একটি ডাবল ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ইত্তেফাক/এসি