শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০৪

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সামছুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়িকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, তিনি মাদক ব্যবসায়ী, হাজতে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, পুলিশ উৎকোচ না পেয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে পুলিশের ১২ জন সদস্যসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম, এসআই তাজউদ্দিন, পিএসআই মাহি আলম, এএসআই হরিকান্ত, কনস্টেবল আরিফুল ও ভুপেনকে জেলা পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। গঙ্গাচড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুশান্ত সরকারকে সাময়িকভাবে ভেন্ডাবাড়ী ফাঁড়ি ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত সামছুল ইসলাম পাশের মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। গত মঙ্গলবার রাতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম উপজেলার বড় দরগাহ্ নামক স্থান থেকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে তাকে আটক করেন। পরদিন ভোরে সামছুল ইসলামের পরিবারের লোকজন তদন্তকেন্দ্রে এলে পুলিশ জানায়, তিনি গভীর রাতে শার্ট গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বেলা ১১টার দিকে অসংখ্য নারী-পুরুষ দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভেন্ডাবাড়ী-বড় দরগাহ সড়কটি উত্তেজিত জনতা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন দোষী পুলিশদের বিচারের আশ্বাস দিলেও অনড় অবস্থায় থাকে জনতা। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢিল ছুড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় সংঘর্ষে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হাফিজুর রহমানসহ পুলিশের ১২ জন সদস্য এবং ভিক্ষুক আব্দুল কাদের, বড় দরগাহ্ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহত ৩০-৩৫ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশ ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে সংঘর্ষের পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টি এম এ মমিন, পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিম প্রমুখ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তাদের আশ্বাসে পরে জনতা শান্ত হয়।

নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী মমেনা বেগম, কন্যাসান্তনা ও বোন ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সামছুল ইসলাম মাদকাসক্ত নন এবং তার মাদক ব্যবসার প্রশ্নই আসে না। তিনি একজন ছাগল ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার রাত ১১টায় শেষ সাক্ষাতের সময়ও তাদের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন ফাঁড়ি ইনচার্জ। তারা নিশ্চিত যে টাকা না দেওয়ায় তাকে পিটিয়ে মেরে এই আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির এলাকায় মাদক-সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি মুরগি ও ছাগল ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। ফাঁড়ি ইনচার্জ শুধু অভিযোগের নামে বিভিন্ন মানুষকে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এর আগে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পেয়েই সকালে সাংবাদিকেরা ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে ভিড় করেন। এ সময় তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাজতে লজ্জায় আসামি আত্মহত্যা করেছেন।’ এ সময় পুলিশ জানায়, তাকে ২০ লিটার চোলাই মদসহ আটক করা হয়। তবে সাংবাদিকেরা উদ্ধারকৃত মদ দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেনি ফাঁড়ি কর্তৃপক্ষ।

বিকালে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার ঘটনাস্থলে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে। রাতেই ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোলাই মদ ব্যবসার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল একটি ইউডি মামলা করে লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

ইত্তেফাক/জেডএইচ