শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মৌমাছি রক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২৮

মৌমাছি মধু সংগ্রহকারী এক পতঙ্গবিশেষ। মধু ও মোম উত্পাদন এবং ফুলের পরাগায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মৌমাছির। পৃথিবীতে ৯টি স্বীকৃত গোত্রের অধীনে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। যদিও এর বেশিরভাগ প্রজাতি সম্পর্কে সঠিক বর্ণনা নেই।

এন্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সব মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িতত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই মৌমাছি আছে। জলবায়ু পরিবর্তন, কীটনাশকের আধিক্য, বায়ু দূষণ, উষ্ণায়ন এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণের প্রভাবে অনেক প্রজাতির মৌমাছির জীবন বিপন্নের পথে। শিল্পায়ন ও আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার মৌমাছির জন্য বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এবার মৌমাছি রক্ষায় সেই আধুনিক বিজ্ঞানকেই কাজে লাগাতে চান বিজ্ঞানীরা। আধুনিক বিজ্ঞানের অনন্য উপহার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে মৌমাছির জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে খুঁজে বের করতে চান বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরেই পৃথিবীর মৌমাছির সংখ্যা কমছে, কিন্তু ঠিক কী কারণে মৌমাছি কমছে তার কোন সঠিক কারণ উদঘাটন করতে সমর্থ হচ্ছে না বিজ্ঞানীরা। সেই জটিল কাজটির দায়িত্ব তারা তুলে দিতে চান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর। ওয়ার্ল্ড বি প্রজেক্ট এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চান। এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘স্মার্ট হাইভস’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৌমাছি এবং মৌমাছির জন্য অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যের সম্পর্ক বুঝতে চান তারা। মৌমাছির শব্দ শুনতে, মৌমাছির পায়ের চলাচল, পাখার নড়াচড়া, মধুর ওজন, মৌচাকের আর্দ্রতা এবং সেখানকার আবহাওয়া ও দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে তারা মৌমাছির চাকের উপর একাধিক সেন্সর বসাবেন।

তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকলের কারিগরি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন অ্যাবেল বলেন, মৌমাছির চাকের উপর সেন্সর বসানোর বিষয়টি এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এই ধরনের সেন্সর বসানো হয়েছে। কিন্তু এবার সেন্সর ব্যবহার এবং এর থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দিয়ে বিশ্লেষণ করতে চান তারা। যন্ত্রপ্রদত্ত উপাত্তকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝতে চান তারা। এক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চান মৌমাছির শব্দকে। বেশ কিছু মৌমাছির খামারে প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে রিডিং ইউনিভার্সিটির জীববৈচিত্র্য বিভাগের অধ্যাপক সাইমন পোটসের মতে, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য কখনোই এক হবে না। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মৌমাছির প্রকৃত অবস্থা বুঝতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তবে এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং যন্ত্রশিক্ষিত প্রযুক্তিকে এক সাথে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাস্থ্যকর মৌচাকের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বেশ ভালো একটা ধারণা লাভ করবো। অনেক সমস্যা সম্পর্কে আগাম সংকেতও পাওয়া যাবে। মৌমাছির অধ্যুষিত এলাকার আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং সেখানকার মৌচাকের মধুর ওজন থেকে অনেক সময় আগেভাগে উচ্চ তাপমাত্রা কিংবা অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে মৌমাছির জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয় মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। মৌচাষিরা মৌমাছিদের বিপদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগেভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবেন।

যুক্তরাজ্যের মৌমাছির ওপর করা এই ‘স্মার্ট হাইভস’ পাইলট প্রকল্পটিকে বৈশ্বিক রূপ দিতে চান তারা। ইতোমধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তের মৌচাষিরা এই প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ওরাকলের পক্ষ থেকেও সাধুবাদ জানানো হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের এসব আগ্রহী মৌচাষিদের। ওরাকলের জন অ্যাবেলের মতে, এক একটা মৌ খামার এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে নতুন নতুন হাজারো তথ্য-উপাত্ত যুক্ত হবে এই প্রকল্পে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা তৈরি করবে এসব তথ্য-উপাত্ত যা কিনা মৌমাছি রক্ষায় হয়তো যুগান্তকারী কোন উপায় খুঁজতে সাহায্য করবে।-বিবিসি

ইত্তেফাক/আরকেজি