শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চশমার কারণে ধরা খেলেন নিজ সন্তানকে হত্যা করা সেই মা!

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৪০

সন্তান লালনপালন করতে বিরক্তির কারণে দুই মাসের ওই শিশুকন্যাকে খুন করেন তারই মা সন্ধ্যা মালো। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা গল্পও সাজান তিনি। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নি। অবশষে অভিযুক্ত সন্ধ্যার চশমা ও এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ তার কাল হয়ে দাঁড়ালো। মূলত এই দুটোর কারণে ধরা পড়েন নিজ সন্তানকে হত্যাকারী এই নারী। ভারতের বেলেঘাটা থানার তদন্তকারী পুলিশ শিশুর মরদেহটি উদ্ধারের পর তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘটনার আসল ঘটনা। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে ভারতের গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সন্ধ্যা মালো দাবি করেন, ২৬ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই এক যুবক ভিতরে ঢুকে তাকে ধাক্কা মারে। আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়ার সময় তিনি ওই যুবককে আবছা দেখেছিলেন। যুবকের পরনে সাদা ট্রাউজার ছিল বলে দাবি করেন সন্ধ্যা। শিশুকে অপহরণের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সন্ধ্যা ছাড়া ফ্লাটের আর কাউকেই পায়নি পুলিশ অথচ বেলেঘাটার ‘মল্লার আবাসন’ একেবারে বড় রাস্তার ধারে জনবহুল এলাকায়। আবাসনে সিসিটিভি না থাকায় রাস্তার সিসিটিভির সাহায্য নেয় পুলিশ। ‘মল্লার' আবাসনের বামদিকে এটিএম কাউন্টার লাগোয়া সিসিটিভি। ডানদিকে ফুলবাগান মোড়ে ডিসিইএসডি অফিসের সামনে সিসিটিভি দুই সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ।

আরও পড়ুন: চলন্ত বাইকে ২ তরুণের গোসলের ভিডিও ভাইরাল

পাশাপাশি সন্ধ্যা যদি হামলাকারীকে আবছাই দেখে থাকেন, তাহলে তিনি পুলিশের কাছে বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্তের স্কেচ আঁকালেন কীভাবে? তা দেখে সন্দেহ বেড়ে যায় গোয়েন্দাদের। রাতে সন্ধ্যার ফ্ল্যাটে পুলিশের তল্লাশি শুরু হয়। উদ্ধার হয় সন্ধ্যার অক্ষত চশমা। ২৬ জানুয়ারি হামলার সময় সন্ধ্যার পরনে কী ছিল? জানতে চেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। আক্রান্ত হওয়ার সময় তার চোখে চশমা ছিল বলে জানিয়েছিলেন সন্ধ্যা। তার অভিযোগ অনুযায়ী, যুবক ঘরে ঢুকেই তাকে ঘুষি ও চড় মারে। তারপর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পুলিশের প্রশ্ন, এতো ধস্তাধস্তিতেও চশমা অক্ষত রইল কীভাবে? তাতেই স্তব্ধ হয়ে যান তিনি। সবমিলিয়ে সন্ধ্যার বয়ানে একের পর এক অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। শেষমেশ জেরায় ভেঙে পড়েন সন্ধ্যা।

সোমবার দুপুরে ভারতের শিয়ালদহ কোর্টে তোলা হয় নিজের ২ মাসের কন্যা সন্তানকে খুনে অভিযুক্ত সন্ধ্যা মালোকে। তার হয়ে সওয়াল করতে রাজি হননি কোনও আইনজীবী। ফলে সরকারি কৌসুলি নিজের বক্তব্য রাখা শুরু করেন। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে গোটা ঘটনাক্রম বিচারককে বুঝিয়ে বলেন তিনি। গোটা সময়টা মাথা নিচু করে এজলাসে দাঁড়িয়ে ছিলেন সন্ধ্যা। ঘটনার বিবরণ শুনে অবাক হয়ে যান বিচারপতিও। এরপরই সন্ধ্যাকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে নিজের ২ মাসের কন্যাসন্তানকে সেলোটেপ পেঁচিয়ে খুন করেন বেলেঘাটার একটি আবাসনের বাসিন্দা সন্ধ্যা মালো। খুন করার পর দেহটি ঢুকিয়ে দেন আবাসনেরই একটি ম্যানহোলে। এরপর মেয়ে অপহরণের গল্প ফাঁদেন তিনি।

ইত্তেফাক/বিএএফ