শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যেসব ভুলে করোনায় যুক্তরাষ্ট্র এত বিপর্যস্ত

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে। এখন দেশটিতে করোনা মহামারি বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বুধবার ২৪ ঘণ্টাতেই দেশটিতে রেকর্ড ৯০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে সিএনএন। মৃতদের মধ্যে কানেকটিকাটের ছয় সপ্তাহের একটি শিশুও আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। যেসব ভুলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এই নাজুক পরিস্থিতি হলো তা ব্যাখা করেছেন অনেক গবেষক।

করোনা ভাইরাসকে প্রথমত গুরুত্ব দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে করা তার মন্তব্য থেকে এটি প্রতীয়মান হয়। টেস্ট কিট, ভেনটিলেটর, পিপিই, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের যথেষ্ট মজুত গড়ে তোলেনি যুক্তরাষ্ট্র। যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা দরকার ছিল তার চেয়ে অনেক কম মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। দেরিতে লকডাউনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলো।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ দেওয়া পরিসংখ্যানে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারি। এরপর ৫০ দিনে রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায় ১০ মার্চ। এরপরের এক সপ্তাহে রোগী ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর পরই শুরু হয় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি। পরের ১২ দিনে রোগী বেড়ে হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার। সঙ্গে বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ এক ব্যক্তি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দেশটিতে করোনা ভাইরাসে ১ থেকে ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

কিন্তু প্রস্তুতির জন্য এত দীর্ঘ সময় পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই হাল হলো কী কারণে? সম্পদের ঘাটতি নেই তাদের। আছে পর্যাপ্ত চিকিত্সা অবকাঠামো, সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তার পরও এই পরিস্থিতি কেন? ২০ জানুয়ারি প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২২ জানুয়ারি এক সাক্ষাত্কারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’ এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাসের সংখ্যা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, ‘আমাদের দেশে মাত্র ১১ জন আক্রান্ত এবং তারাও সেরে উঠছেন।’ ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনারা হয়তো করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন করবেন। আমি বলছি, যুক্তরাষ্ট্রে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আছে।’ দেড় মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন এসব বলে চলেছেন, তখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে দু-চার জন করে বাড়ছে আর ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। এরপর গত অর্ধমাসে কীভাবে তা ছড়াল বিশ্ব দেখেছে। শুধু প্রেসিডেন্ট নন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও একইভাবে আশ্বস্ত করে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।

মার্কিন প্রশাসন একদিকে মুখে মুখে আশ্বস্ত করেছে, অন্য দিকে রোগ পরীক্ষা এবং লোকজনকে কোয়ারেন্টাইন (সঙ্গনিরোধ) ও আইসোলেশনের (বিচ্ছিন্নকরণ) পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। ঠিকমতো পরীক্ষা না হওয়ায় একটি ভুল বার্তা পেয়েছে দেশের মানুষ, জানতে পারেনি দেশে আসলে কত মানুষ আক্রান্ত। ফলে তারাও বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। চলাফেরা-মেলামেশায় সতর্ক হয়নি। এই ফাঁকে ট্রাম্পের সেই ‘মাত্র ১১ জন’ ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তরুণরা ছুটিতে সাগর সৈকতগুলোতে ভিড় করেছে। বিদেশিরাও অবাধে যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করেছে।

তবে চীনে জানুয়ারির শেষের দিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছিল, তখনই ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। মার্কিনদের চীন ভ্রমণে সতর্ক করার কথাও তারা জানিয়েছিল। এসব সতর্কতা এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে আনার জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ চেষ্টা করেছেন স্বাস্থ্য ও হিউম্যান সার্ভিস মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার।

এরপর দিনে দিনে রোগী বেড়েছে, বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। সতর্কতা থেকে একপর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা। একে একে সবকিছু বন্ধ, লকডাউন। কিন্তু তত দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি।

ইত্তেফাক/আরকেজি