শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো ‘বিচারক’ হলেন হিজাবধারী মুসলিম নারী 

আপডেট : ২৭ মে ২০২০, ২১:১৩

প্রথমবারের মতো একজন হিজাবধারী মুসলিম নারী ব্রিটেনের বিচারকের আসনে বসেছেন। ৪০ বছর বয়সী হিজাবধারী ওই মুসলিম জজের নাম রাফিয়া এরশাদ। তিনি তরুণ মুসলিমদের জানাতে চান যে, যদি তারা মনে করেন তাহলে সব কিছুই অর্জন করা সম্ভব।

রাফিয়ার বয়স যখন ১১ বছর তখন থেকেই তিনি নিজেকে একজন বিচারক বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তখন প্রশ্ন উঠেছিল, তার মতো একজন সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মুসলিম মেয়ের পক্ষে সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তো? কিন্তু মাত্র ৩০ বছরের মধ্যেই তিনি একজন ব্যারিস্টার হয়েছেন এবং সেই সঙ্গে গত সপ্তাহে দেশটির মধ্য-ভূমিতে একজন উপজেলা জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। 

তিনি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মেট্রেকে বলেন, আমি একজন নারী হয়ে বিচারক হয়েছি, শুধু মুসলিম নারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা তা নয় বরং এটি সব নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবুও এটি মুসলিম নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার অর্জন নিয়ে আনন্দিত। কিন্তু আমি তার চেয়ে বেশি আনন্দিত যখন আমি অন্যদের সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ পথচলার বিষয়টা শেয়ার করতে পারি।

তিনি বলেন, এটা ওইসব হিজাবধারী নারীদের বের করে আনতে সহায়তা করবে, যারা কিনা একজন জজ হওয়া তো দূরের কথা, একজন ব্যারিস্টার হওয়ার কথাও কল্পনা করতে পারেন না।

২০০১ সালে আইনের স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ভাইবা দেওয়ার সময় তার পরিবারের লোকেরা তাকে হিজাব পড়তে বারণ করেছিলেন। যা তিনি জজ হিসেবে যোগদানের পর বর্ণনা করলেন। রাফিয়ার পরিবার বলেছিল যে, যদি সে হিজাব পড়ে তাহলে তার ভর্তির সুযোগ নাটকীয়ভাবে কমে আসতে পারতো। কিন্তু রাফিয়া তার পরিবারের এই চাপকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

তিনি বলেন, আমি এটি পড়ি আমার জন্য। কিন্তু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে অন্যরা এটা কতটা গ্রহণ করছে। ভাইবায় যাওয়ার সময় ভেবেছিলাম যদি আমার পেশার জন্য আমাকে এই হিজাব পড়া থেকে বিরত থাকতে হয় তাহলে আমি তা চাই না। তাই আমি হিজাব পড়েই ভাইবা দিয়েছিলাম এবং সফল হয়েছিলাম। এবং আমাকে যথেষ্ট বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। আমি মনে করি এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এটি দৃঢ় হয়ে উঠেছিলো যে, হ্যাঁ আমি পারবো।

লন্ডনে প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০০৪ সালে রাফিয়া নটিংহামে এস.টি ম্যারি,র পারিবারিক আইন চেম্বারে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রায় ১৫ বছর যাবত তিনি ব্যক্তিগত ল চেম্বারের জোর করে বিয়ে, ইসলামিক আইনের কোনো কেস, নারী নির্যাতনের উপর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কারণে ইসলামি পারিবারিক আইনের একজন দক্ষ নেতৃত্বদানকারী আইনজীবী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। 
 
তিনি বলেন আমার সফলতার পরেও অনেকেই কোর্টে আমাকে প্রশ্ন করতেন আমি একজন ক্লাইন্ট কি না? আমি উত্তর দিতাম না। আবার প্রশ্ন করতো, তাহলে আপনি একজন দোভাষী? তখনও উত্তরে বলতাম না, আমি সেটাও নই। আবারও বলতো, আপনি এখানে কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এসেছেন? আমি তখনও বলতাম না। আমি আসলে একজন ব্যারিস্টার। আসলে আমার ওই ব্যক্তির প্রতি কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু এটা একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি বটে।

আরও পড়ুন: আবারো স্পেস এক্স এর কার্যক্রম শুরু করল নাসা

রাফিয়া বলেন, ব্রিটেনের আদালত আমাকে একজন হিজাবধারী মুসলিম নারী হিসেবে বিচারক নিয়োগ দেননি। বরং তারা আমাকে আমার মেধার মূল্যায়ন করে নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু আমাকে, প্রত্যেক পেশার এমন সফলদেরকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে নারীরা এগিয়ে যেতে পারে।


ইত্তেফাক/আরআই