শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক মোকাবেলায় ভারত

'সমালোচকরা যাই বলুক, সঠিক পথে হাঁটছে মোদি সরকার'

আপডেট : ০১ জুন ২০২০, ২০:২২

সমালোচকরা যাই বলুক না কেনো, করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মোদি সরকারের অধীনে ভারত সঠিক পথেই হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন আইএমএফ-এর ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং ভুটানের নির্বাহী পরিচালক সুরজিত ভাল্লাহ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তিনি লেখেন, ভারত করোনার মহামারী মোকাবেলায় জিডিপি'র প্রায় ৫ ভাগ খরচের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা ইউরোপিয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশের থেকে বেশি।

তিনি বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'হৃদয় নেই' বলে যে সমালোচনা করা হচ্ছিলো তা সঠিক নয়। অনেকেই বলছিলেন করোনায় মোকাবেলায় দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও ব্যাংক যথেষ্ট বরাদ্দ দিচ্ছে না। কিন্তু সত্য হলো ভারত যেই পথে হাঁটছে সেটাই সঠিক পথ। অন্ততপক্ষে আইএমএফ এর নির্দেশিত পথ অনুসারে মোদি সরকার সঠিক পথে হাঁটছে।

'পরবর্তী বছরের বাজেটে মহামারী মোকাবেলায় মোট জিডিপির মাত্র ৫ ভাগ বরাদ্দ দিয়ে মোদি সরকার প্রমাণ করেছে তাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই'- এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে তাদের জিডিপির অনেক বড় অংশ বরাদ্দ দিয়েছে। জাপান প্রায় ২১ ভাগ বরাদ্দ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি বাজেটের বড় অংশ শুধু প্রণোদনায় বরাদ্দ দিলে তা মোটেও কার্যকর হবে না। বরং দুইভাবে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথমত, সরাসরি প্রণোদনা, যেখানে সরকারকে অর্থ খরচ করতেই হবে, ভিন্ন কোন উপায় নেই। এ ছাড়াও লোন সুবিধা বা অর্থনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমেও প্রণোদনা প্রদান করতে পারে সরকার। আর যে কোন এক প্রকারের প্রণোদনার মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বরং বিভিন্নভাবে এই প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। কেবলমাত্র তখনই এটি কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, ভারতের এমএসএমই সমস্যা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় কিছুদিন আগেও সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংকের সমালোচনা করছিলো যারা, তাদের সেই সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে এ সমস্যার শতভাগ সমাধান নিশ্চিত করেছে মোদি সরকার। অবশ্য সরকারের সেই ভালো উদ্যোগ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করেননি এই সমালোচকবৃন্দ। কিন্তু এখনো সমালোচনা চলছে দেশের মোট বাজেটে প্রণোদনায় বরাদ্দ নিয়ে।

এ সময় তিনি উন্নত দেশগুলোর তথ্য সামনে এনে বলেন, জাপান তার জিডিপি'র ২১ ভাগ প্রণোদনা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র জিডিপির ১৩ ভাগ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ইউরোপিয় ইউনিয়ন ভুক্ত অধিকাংশ দেশ মাত্র ৪ ভাগ বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে ভারত অনেক দেশ থেকেই বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।

ভারতের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নরেন্দ্র মোদি ১২ মে স্বনির্ভর ভারত তৈরির ঘোষণা দেন যেখানে পাঁচ স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন- অর্থনীতি, অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা, প্রাণবন্ত জনমিতি এবং দাবি। তার এই ঘোষণার ১ সপ্তাহের মধ্যে মোদি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ভারতের কৃষি, শ্রমবাজার এবং শিল্প নিয়ে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। সমালোচকরা এখনো চলতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করে গেলেও মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাগুলোর দিকে তাকাচ্ছে না। আইএমএফ এই মহামারীতে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পলিসি বা পরিকল্পনা যাচাই করে দেখছে। বিশ্বের ১৯৩ দেশের পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র বিশ্লেষণ করে আইএমএফ মনে করছে, ভারত উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দুর্দান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

আইএমএফ এর পলিসি ট্রাকার (আইএমএফ-পিটি) অনুসারে, ভারতের অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল করতে কমপক্ষে জিডিপির ৩.৫ ভাগ প্রণোদনা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি আরো .৫ ভাগ যুক্ত করতে হবে জরুরি সহায়তার জন্য। এর মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট জিডিপির ২.৭ ভাগ এমএসএমই ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ ভাগ দেয়া হবে শতভাগ ক্রেডিট গ্যারান্টিসহ।

তিনি মনে করেন, ভারত তার দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষিত অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাবে এই মহামারীর জন্য গৃহীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে।

ইত্তেফাক/আরএ