বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের মধ্যেও পুলিশি নির্মমতার আরও নজির 

আপডেট : ০৬ জুন ২০২০, ০০:৩৭

যুক্তরাষ্ট্রের  মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নির্মমতায় প্রাণ হারানো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে যখন দেশটির নানা জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে, তখন এসব বিক্ষোভের সময়ও পুলিশি নির্মমতার বেশ কিছু ভিডিও মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।

নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় শহর বাফেলোতে দুজন পুলিশ অফিসারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে তাদের একজন শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিতে দেখা গেছে, যার পর তদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আর নিউ ইয়র্ক শহরে, ছুটে পালানো বিক্ষোভকারীদের প্রতি পুলিশের নির্দয় আচরণের ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।

মিনিয়াপোলিসে যেখানে জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান, সেই শহরে তার স্মরণে একটি অনুষ্ঠান শেষ হবার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এসব পুলিশি নির্মমতার ঘটনা ঘটে।

জর্জ ফ্লয়েডের ওপর নির্যাতনের ভিডিও ছবি একটা আলোড়ন ফেলে দেয় এবং এর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন শহরে আফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর পুলিশের আচরণ এবং বর্ণবৈষম্য নিয়ে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

গত আট দিন ধরে যেসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে তার একটা বড় অংশই ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু কিন্তু কোন কোন বিক্ষোভে সহিংসতা ও দাঙ্গা হয়েছে এবং বেশ কিছু শহরে এ কারণে কারফিউ জারি করতে হয়েছে।

অন্য একটি ঘটনায় অ্যারিজোনার পুলিশ আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ডিওন জনসনের মৃত্যুর বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। ২৫শে মে তারিখে যেদিন জর্জ ফ্লয়েড মারা যান, সেই একই দিনে অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে মারা যান জনসন।

জনসনকে ওই রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয় তার গাড়ি যান চলাচল আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছিল এবং তাকে গাড়ির চালকের আসনে 'অচেতন অবস্থায় দেখা যায়'।

'সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে মোকাবেলার সময় পুলিশের সাথে তার ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় এবং সশস্ত্র পুলিশ সদস্য তার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সন্দেহভাজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়,' পুলিশ জানায়।

পুলিশের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং এবং পরিবহন দপ্তরের রেকর্ড করা ঘটনার ভিডিও যখন পরিবারের হাতে দেয়া হয় তখনই পুলিশের এই বিবৃতি প্রকাশ হয়।

ভিডিওগুলোতে কী দেখা গেছে?

বাফেলোর ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশ যখন কারফিউ বলবৎ করছিল তখন ৭৫ বছর বয়স্ক একজন পুরুষ পুলিশের দিকে এগিয়ে যান। পুলিশ তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে এগিয়ে যায়। ধাক্কায় ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান।

দেখা যায় ওই বৃদ্ধ মাটিতে পড়ে আছেন এবং তার কান থেকে গলগল করে রক্ত বেরচ্ছে।

ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং হাসপাতালে নেয়ার পর দেখা যায় তার মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে।

বাফেলো পুলিশ বিভাগ থেকে প্রথমে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল তাতে বলা হয়, ওই ব্যক্তি "'হোঁচট খান'' এবং ''বিক্ষোভকারীদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তির সময়'' তিনি মাটিতে পড়ে যান। এই বিবৃতি সোসাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভে আরও মাত্রা যোগ করেছে।

পুলিশের একজন মুখপাত্র জেফ রিনোল্ডো পরে বলেন, যে অফিসাররা ওই বিবৃতি দিয়েছিলেন তারা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। তিনি আরও জানান যখন এই ভিডিও প্রকাশ পায় যাতে দেখা যায় দুজন পুলিশ অফিসার ওই বৃদ্ধ বিক্ষোভকারীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে তখন তাদের বেতন না দিয়ে বরখাস্ত করা হয়।

সেই একই দিন সন্ধ্যায়, নিউ ইয়র্ক শহরে একজন সরবরাহ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় শহরে কারফিউ শুরু হবার ২৭ মিনিট পর। অথচ ওই চালক ছিলেন জরুরি সেবা কর্মী এবং কারফিউয়ের আওতার বাইরে।

টুইটারে পোস্ট করা ঐ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ম্যানহাটান থেকে ইউনিফর্ম পরা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে। তার সাইকেলের পাশে সরবরাহ করার জিনিসের বাক্স রাখা আছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল জরুরি সেবা কর্মীরা কারফিউয়ের আওতার বাইরে থাকবে।

শহরের উইলিয়ামসবার্গ এলাকায় তোলা আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধরছে, এদের মধ্যে অন্তত একজন বিক্ষোভকারীকে মাটিতে ফেলে তাকে গ্রেপ্তার করার দৃশ্য ভিডিওটিতে ধারণ করা হয়েছে।

অন্যান্য ভিডিওতে দেখা গেছে এক ব্যক্তি মাটিতে পড়ে আছেন, তার মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিবিসি। 

ইত্তেফাক/এসআর